মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমদানি পণ্য খালাস হয় মাঝ নদীতে

রুহুল আমিন রাসেল

জাহাজে আসা আমদানি পণ্য খালাস হওয়ার কথা মোংলা সমুদ্র বন্দরে। কিন্তু তা না হয়ে গোপনে পণ্য খালাস হয় মাঝ নদীতে। প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের হারবারিয়া পয়েন্টে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য খালাসের চাঞ্চল্যকর এই তথ্য মিলেছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার তথ্য রয়েছে। ওজন না করেই পণ্য খালাস, কারচুপি, আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এর সঙ্গে নিরাপত্তা কাজে জড়িত সদস্যদেরও জড়িত থাকার তথ্য একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বলে সূত্র জানায়।

সূত্রমতে, সরকারের রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড— এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার কাছে গত সপ্তাহে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে শুল্ক ফাঁকি ও মিথ্যা ঘোষণায় লোহা এবং লৌহজাত পদার্থ খালাস সম্পর্কিত ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়— বাংলাদেশ লৌহজাত পণ্যের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিদেশ থেকে লোহা ও লৌহজাত পদার্থ আমদানি করে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ৬০ থেকে ৬৫ ধরনের লৌহ ও লৌহজাত পণ্য আমদানি করা হয়। এক্ষেত্রে আমদানিকারক কোম্পানি নিয়মিত শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে বলে জানা যায়। কাস্টমস ও বন্দরের  ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্টতায় সরকার রাজস্ব হারানোর ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়— শুল্ক ফাঁকির ক্ষেত্রে পণ্য খালাসে জড়িত সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং আমদানিকারকদের এক ধরনের চুক্তি থাকে। এতে নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে পণ্য খালাস করে সিএন্ডএফ এজেন্টরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিয়মগুলো সাধারণত ঘোষিত পণ্যের পরিবর্তে শুল্ককর বেশি, এমন পণ্য এবং কখনো কখনো দ্বিগুণ পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়, যা শুল্ক ফাঁকি ও অনিয়মের মাধ্যমে খালাস হয়ে তাকে। অনিয়ম ও শুল্ক ফাঁকি সম্পর্কে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়— সাধারণত আমদানি হওয়ায় লোহা জাতীয় পণ্যের প্রস্থ ও পুরুত্ব বিভিন্ন রকম হয়। এক্ষেত্রে ওজন কারসাজি করে প্রতিকেজিতে ২২ টাকা বা টনপ্রতি ২২ হাজার টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। আবার পণ্যের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে লৌহজাত শিট আমদানি করে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়। প্রতিটি আমদানিকারক লৌহজাত পণ্যের ওজন কম দেখিয়ে মিথ্যা ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে আমদানি পণ্যের ওজন নিরক্ষণ না করে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে খালাস কার্যক্রম শুরু করে। ডেলিভারি পর্যায়ের ওজনস্কেলে উঠানোর আগে বন্দরে দায়িত্বরত কাস্টমস কর্মকর্তা অবৈধ অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে ওজন কম দেখান। ফলে প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই শুল্ক ফাঁকির মাধ্যমে পণ্য খালাসের সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এক্ষেত্রে সর্বশেষ বন্দরের গেটে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কাজে জড়িত সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ প্রদান করে পণ্য খালাস করতে সক্ষম হয় ব্যবসায়ীরা। গোপনে পণ্য খালাস সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়— পণ্য আমদানিকারকরা মোংলা সমুদ্র বন্দরের মূল জেটি দিয়ে লৌহ ও লৌহজাত পণ্য খালাস না করে সিএন্ডএফ এজেন্টদের সহযোগিতায় নদীপথের হারবারিয়া পয়েন্টে খালাস করে। এক্ষেত্রে সিএন্ডএফ এজেন্টদের সহযোগিতায় বন্দর ও কাস্টমসের কর্মকর্তাদের টাকা প্রদান করে পণ্য খালাস করে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে মোংলা সমুদ্র বন্দরে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিমাপের জন্য দুটি ওজন পরিমাপক যন্ত্র আছে। একটি দিয়ে ১০০ টন এবং আরেকটিতে ৫০ টন পর্যন্ত পণ্যের ওজন পরিমাপ করা যায়। কিন্তু আমদানিকারকরা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ ও কাস্টমসের সহযোগিতায় আমদানি হওয়া লৌহজাত পণ্যের ওজন পরিমাপ না করেই শুল্ক ফাঁকি দেয় বলে জানা যায়। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য খালাস এবং কোনো ঘোষণা ছাড়াই অতিরিক্ত খালাস উভয় ক্ষেত্রের সমঝোতার মাধ্যমে বিভিন্ন পদমর্যাদা অনুযায়ী অবৈধভাবে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে কাস্টমসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত থাকেন। এক্ষেত্রে কাস্টমসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাই অবৈধভাবে পণ্য খালাসে মূল ভূমিকা পালন করেন। এ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বন্দরে কাস্টমসের নজরদারির পাশাপাশি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগেরও তৎপরতা রয়েছে। এর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অভিযান পরিচালনা করে থাকে শুল্ক গোয়েন্দা।

সর্বশেষ খবর