রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অহিংস নির্বাচন চায় বিদেশি বন্ধুরা

শেষ মুহূর্তেও বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেবেন কূটনীতিকরা

জুলকার নাইন

অহিংস নির্বাচন চায় বিদেশি বন্ধুরা

সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সহিংসতামুক্ত পরিবেশে একটি স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে আসছেন ঢাকার বিদেশি কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা বাংলাদেশের বন্ধুরা। গত জানুয়ারি থেকেই নির্বাচন ইস্যুতে জোর পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। আগেরবার বর্জন করা বিএনপিকে এবার যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচন করতে উৎসাহিত করার অবস্থানে সোচ্চার উন্নয়ন সহযোগীরা। একই অবস্থানে রয়েছেন পশ্চিমাসহ প্রতিবেশী দেশের কূটনীতিকরা। এ জন্য সরাসরি কোনো দূতিয়ালি না করলেও নীরবে কাজ করছে দূতাবাসগুলো। সরকারের কাছে প্রতিশ্রুতি আদায়ের চেষ্টা করছেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের। এরই মধ্যে সরকারের সংলাপের উদ্যোগ বিদেশিদের কাছে রীতিমতো চমক নিয়ে হাজির হয়। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে ফের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কায় আছে বিএনপিসহ রাজনৈতিক একটি বড় পক্ষ। তাই বাংলাদেশে আসলে কী হতে যাচ্ছে তা তীক্ষ দৃষ্টিতে রাখছে অধিকাংশ দূতাবাস। পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টায় ঘরোয়া বৈঠকগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। অবশ্য আগামীকাল নির্ধারিত এক বৈঠকে বিএনপির কাছ থেকে সরাসরি বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করছেন বিদেশি দাতা, উন্নয়ন সহযোগী এবং পশ্চিমা প্রভাবশালীরা।  সূত্রের খবর, পর্দার সামনে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার উদ্যোগ দৃশ্যমান না থাকায় কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগীরা নিজেদের গণ্ডির ভিতরেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী দুই দেশ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে একটি অবাধ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা। প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশে জনগণের রায়ের ওপর জোর দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করেছে। প্রায় ভারতের অনুরূপ প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রেরও। তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, যেখানে জনগণের ইচ্ছার প্রকৃত প্রতিফলন ঘটবে। প্রতিক্রিয়া আছে চীনেরও। তারা বলছে, বাংলাদেশের জনগণের পছন্দকে স্বাগত জানাবে বেইজিং। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেই যাচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সবাই চান সহযোগিতা করতে। প্রাক নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে নভেম্বরেই বাংলাদেশে আসবে তাদের প্রতিনিধিরা। ইতিমধ্যেই ইসির সঙ্গে বৈঠক করে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির সক্ষমতা আছে কিনা, তা জানতে চেয়েছে ইইউ। সেখানে তারা সিটি নির্বাচনে অনিয়ম ও ইসির তৎকালীন ভূমিকার কথা এনেছিল আলোচনায়। ঢাকায় ইইউর আবাসিক প্রতিনিধি দলের প্রধান রেনজি টেরিংক বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর সূক্ষ্মভাবে নজর রাখা হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত ইইউ। সর্বশেষ ঢাকা সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। যে নির্বাচনের মাধ্যমে এ দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রকৃত প্রতিফলন ঘটবে। অন্যদিকে, ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, প্রতিবেশী দেশের গণতন্ত্রের প্রতি আমরা আস্থাশীল। এ কারণেই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাই। বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে ভারত কোনো সহিংসতা আশা করে না। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুয়ো বলেন, চীন বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে চায়। তিনি বলেন, আমি আশা করি বাংলাদেশে খুব নির্ঝঞ্ঝাট সাধারণ নির্বাচন হবে এবং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। পশ্চিমা দূতাবাসগুলোর বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার অন্যতম কারণ ছিল অধিকাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হওয়া। এর ফলে ভোটাররা তাদের পছন্দ জানানোর সুযোগ পায়নি। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন হবে বলেই মনে করছেন বিদেশিরা। দূতাবাসগুলোও রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করছে। এমন একটি নির্বাচন করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সরকারেরও একটি জোরালো অঙ্গীকার আছে। অন্যদিকে, রাজনীতিতে সরকারি জোটের বিপরীতে নতুন করে আবির্ভাব হওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইতিমধ্যেই একবার ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের কাছে ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য তুলে ধরেছে। আজ তাদের সঙ্গে বসবেন জাতীয় ঐক্যজোটের মূল শক্তি বিএনপি। রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হবে এ বৈঠক। বরাবরই বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চাপে রাখা বিদেশিদের কাছে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনের ইস্যুতে কী ব্যাখ্যা দেয় এটাই এখন আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে বিদেশিদের কাছে।

সর্বশেষ খবর