রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

পঞ্চগড়-ঢাকা সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু

পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

পঞ্চগড়-ঢাকা সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু

দেশের সর্বউত্তরের জেলা থেকে সরাসরি ঢাকা-পঞ্চগড় ট্রেন যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে পঞ্চগড়বাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো। এ নিয়ে পঞ্চগড়ে বইছে আনন্দের বন্যা। ট্রেন স্টেশনে হাজারো মানুষের ভিড়। যেন আনন্দঘন উৎসব পালন করছেন তারা। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচির আয়োজন করছে। গতকাল সকাল ৭টা ২০ মিনিটে দেশের দীর্ঘতম রেলপথের শুরুর এই স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় দ্রুতযান এক্সপ্রেস। রেলের পতাকা উড়িয়ে ঢাকা-পঞ্চগড় আন্তঃনগর ট্রেন উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ।

এ সময়  উপস্থিত ছিলেন, পঞ্চগড় ২ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন, রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট প্রমুখ।

এদিকে এখন থেকে প্রতিদিন ঢাকা থেকে দ্রুতযান ছাড়বে রাত ৮টায় এবং একতা ছাড়বে সকাল ১০টায়। ৯৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের আওতায় পার্বতীপুর থেকে ঠাকুরগাঁও হয়ে পঞ্চগড় পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটারের এ রেললাইনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। ওই বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেল লাইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কাজের সূচনা করেন। রেললাইনের কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালের ১৭ জুন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক দিনাজপুর পর্যন্ত একটি ইন্টারসিটি শাটল ট্রেন উদ্বোধন করেন। পরে এই নিয়ে স্থানীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আন্দোলন শুরু করে। তারা সরাসরি ঢাকা-পঞ্চগড় ট্রেন চলাচলের দাবি করে। এ বছরের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁওয়ের এক জনসভায় এ জাতীয় দাবি সংবলিত ব্যানার দেখতে পেয়ে তার বক্তব্যে বলেন, ব্যানার নামিয়ে ফেলুন পঞ্চগড় ট্রেন যাবে। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ফলে সব শ্রেণিপেশার মানুষ আনন্দিত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত সচিব বলেন, এই ট্রেন লাইনকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। এই বন্দর দিয়ে আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গেও রেল যোগাযোগের চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

দীর্ঘ রেল রুট ঠাকুরগাঁও : ঢাকা-পঞ্চগড় দেশের সর্বোচ্চ দূরত্বের ট্রেন সার্ভিস। ঢাকা থেকে যার দূরত্ব ৬৩৯ কিলোমিটার।   ঠাকুরগাঁওয়ে এই ট্রেন উদ্বোধন করেন-রমেশ চন্দ  সেন এমপি। এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহা. সাদেক কুরাইশী উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ৮টায় ঠাকুরগাঁও স্টেশন ছেড়ে যায় দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো এই রেল চালুর মাধ্যমে। এ নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ঠাকুরগাঁও শহরের ঘোষপাড়ার মাহামুদ হাসান প্রিন্স জানান, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি ঠাকুরগাঁওবাসীর প্রাণের দাবি পূরণ করেছেন। তবে ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য আলাদা একটি ট্রেনের দাবি করছি। এতে এ জেলার মানুষের যোগাযোগ আরও উন্নত হবে। ট্রেনযাত্রী কনক, মজিবর হোসেনসহ অনেকে বলেন, স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের উন্নত বসার ব্যবস্থা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখাসহ টয়লেট ব্যবস্থাপনা আর যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ঠাকুরগাঁও রোড স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার অনুপ বসাক বলেন, একতা এক্সপ্রেস পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁও হয়ে রবিবার সকাল ৮টায় কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে।

সর্বশেষ খবর