মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

টার্গেট করে বাড়ি ভাড়া

মির্জা মেহেদী তমাল

টার্গেট করে বাড়ি ভাড়া

সব বাসা তিনি ভাড়া নেন না। টার্গেট করে ৪ তলা, ৫ তলা বাড়ি ভাড়া নেন। ভাড়া নেওয়ার আগে এলাকায় খুঁজে বের করেন তার পছন্দের বাড়িওয়ালাকে। বাড়িওয়ালা নিরীহ অথবা বয়স্ক হতে হবে। অথবা যে বাড়ির মালিক দেশেই থাকেন না, যাদের ভয় দেখালে ভয় পাবেন, নানাভাবে হেনস্তা করতে পারবেন এমন বাড়িওয়ালাকে খুঁজে বের করেন তার নিজস্ব বাহিনীর সদস্যরা। বাসা ফাঁকা পেলে খবর দেন। এরপর ভাড়া নিতে যান। মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে-ভালিয়ে ভাড়া নেন। একটি বা দুটি ফ্ল্যাট নয়, পুরো বাড়ি তার প্রয়োজন। কোনো বাড়িতে তিনি কলেজ করেন। কোনো বাড়ি নেন হোস্টেলের জন্য। আবার ছাত্রছাত্রী পড়ানোর জন্যও ভাড়া  নেন বেশ বড় বাড়ি। চুক্তিও করেন তিনি। কিছুদিন ভালোভাবেই কাটে বাড়িওয়ালার সঙ্গে। বাড়িওয়ালাও তাকে শিক্ষিত মার্জিত লোক হিসেবেই মনে করেন। শিক্ষক মানুষ, কলেজ গড়েছেন। তাকে ভালো মনে করতেই হবে। কিন্তু কিছু দিন পর সেই ভাড়াটিয়ার মুখোশ খুলে যায়। ভাড়া বন্ধ করে দেন। আস্ত চারতলা বাড়ি নিজেই ভোগ-দখলে রাখার চেষ্টা করেন। ভাড়া পরিশোধ বা চুক্তি মতে বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেই তিনি ক্ষেপে যান। আদালত বা থানায় গিয়ে মামলা করে দেন উল্টো বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধেই। অথবা তার পেটুয়া বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হয় বাড়িওয়ালার পেছনে। বাড়িওয়ালা যেহেতু নিরীহ বা বয়স্ক, তারা তার পেছনে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তখন সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেন সেই ভাড়াটিয়াই। ভাড়ার টাকাও অনেকে ছেড়ে দেন ভয়ে।

রাজধানীর বুকে একের পর এক এমন ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। যারা কলেজ বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছে। পড়ে নানা অজুহাতে মাসের পর মাস তারা বিনা ভাড়ায় বাসাগুলোতে অবস্থান করে। বাড়িওয়ালা তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। এমনই এক ভয়ঙ্কর ভাড়াটিয়ার সন্ধান মিলেছে খোদ ঢাকা শহরে। নাম তার আজিজুর রহমান সুমন। এই আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে। কলেজের ছাত্রীর কাছ থেকেও রয়েছে নানা অভিযোগ। এসব অভিযোগের কারণে তাকে হাজতবাস করতে হয়েছে।  নিকুঞ্জ-২ এর তিন নম্বর রোডের ৫ তলা ভবনের তিনটি ফ্লোর তিনি ভাড়া নিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজ। আজিজুর রহমান সুমন সাত বছরের চুক্তি করেন। বাড়ির মালিক জুলিয়া এহসানের সঙ্গে করা চুক্তি গত ১ জুলাই শেষ হয়। কিন্তু আজিজুর রহমান সেই বাসা থেকে উঠছেন না। শুধু তাই নয়, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তিনি কোনো ভাড়াও পরিশোধ করেননি। বাড়িওয়ালা জুলিয়া এহসান তার কাছে ভাড়া চাইতে গেলে আজিজুর রহমান সুমন উল্টো আদালতে গিয়ে বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে পিটিশন দেন। আদালত এটি খিলক্ষেত থানাকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। পুলিশ তদন্ত করে। তদন্ত করে পুলিশও জানতে পারে আজিজুর রহমানের নানা কীর্তি। পুলিশ সেই প্রতিবেদন আদালতে পাঠায়। পুলিশ জানায়, এই ব্যক্তির কাজ বাসা ভাড়া নেওয়া। সেখানে তিনি কলেজ বা হোস্টেল করেন। সময় সুযোগ মতো বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধেই নানাভাবে হেনস্তা করেন।

চুক্তিমতো বাসা ছেড়ে দিতে বললে আজিজুর রহমান সুমন বাড়িওয়ালা জুলিয়া এহসানকে বলেন, ‘বাসা ছাড়ব না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে একদম মেরে ফেলব।’

জুলিয়া এহসান বলেন, ‘আমি এবং আমার পরিবার এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমরা এই আজিজুর রহমানের ফাঁদ থেকে বাঁচতে চাই। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে খিলক্ষেত থানায় গত ৬ জুন জিডি করেছি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজিজুর রহমান সুমন নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় এমন ৫টি ভবন ভাড়া নিয়েছেন। একটি বাসায় তিনি নিজেই থাকেন। সেই বাসার বাড়িওয়ালা দেশেই থাকেন না। এক মাসের ভাড়া দেন তো আরেক মাসের ভাড়া দেন না। তিনি রেসিডেন্সিয়াল কলেজের সাইনবোর্ড দেখিয়ে সবার সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কলেজ দেখে কেউ কোনো কথাও বলেন না। ১ নম্বর রোডের চারতলা ভবন কলেজের কথা বলে ভাড়া নেন। সাইনবোর্ড থাকলেও তিনি সেখানে ছাত্রছাত্রী পড়ানোর জন্য রেখেছেন। সেই বাড়ির মালিক বাদশা মিয়া। তাকেও নানাভাবে হয়রানি করছেন এই আজিজুর। গতকাল তিনি বলেন, এই লোক বাসা ভাড়া নিয়ে টাকা দেন না। তার কাজই এটা। অনেক দিন ঘোরার পর আমাকে চেক দিয়েছেন। কিন্তু ব্যাংকে কোনো টাকা ছিল না। এ কারণে চেক বাউন্সের মামলা করেছি। নিকুঞ্জ-৮ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর হাউসেও ছিল ঢাকা  রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজ। সেখানে এখন রয়েছে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র। সেখানে কথা হয় এ ভবনের ম্যানেজারের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘এখানে কখনই ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজের ক্যাম্পাস ছিল না। তৃতীয় তলার ওপর থেকে একটা সময় তাদের হোস্টেল ছিল। কিন্তু অনিয়মিত লেনদেনের কারণে ভবন মালিক তাদের চলে যেতে বললে কলেজের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান সুমন তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাকে মেরে  ফেলার চেষ্টা করেন। পরে এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা করা হলে তারা এ ভবন ছাড়তে বাধ্য হন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর