মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতীক ব্যবহার করবে না জাপা-জামায়াত

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থাকলেও দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়েই ভোটযুদ্ধ করবে জাতীয় পার্টি (জাপা)। প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে সম্মত নয় দলটি। এরই মধ্যে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক না থাকলেও জোটপ্রধান বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবে না। তাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রতীকেই ভোট করবেন। উভয় দলের শীর্ষ পর্যায় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার স্বাক্ষরিত গতকাল নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়েছে। দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যেসব আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সমঝোতা হবে সেগুলোতে নৌকা প্রতীক থাকবে না। একইভাবে জাতীয় পার্টিও সমঝোতা হওয়া আসন থেকে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবে। পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মহাজোট নিয়ে আলোচনা চলছে। দু-এক দিনের মধ্যেই ঘোষণা আসবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন মিলন বলেন, আমরা জোটে থেকেই ভোট করব। তবে আমাদের নিজস্ব প্রতীক ‘লাঙ্গল’ নিয়ে। নির্বাচন কমিশনকে আমরা তা চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত তালিকায় নিজের নাম ওঠানোর জন্য পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, সিনিয়র  কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারসহ শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করছেন। গতকাল জানানো হয়েছে, জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র বিতরণের তারিখ দুই দিন বাড়িয়ে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ১৬ নভেম্বর দলীয় চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে। দ্বিতীয় দিনের মতো গতকালও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের অফিস  থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো মনোনয়নপত্র তোলেন অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, সাইদুর রহমান টেপা, শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, মীর আবদুস সবুর আসুদ, আতিকুর রহমান আতিক, এ টি ইউ তাজ রহমান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, এ কে এম আশরাফুজ্জামান খান প্রমুখ। এর আগে প্রথম দিনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল আলম রুবেল, লিয়াকত হোসেন খোকাসহ পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা শোডাউন করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। গতকাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির ১ হাজার ১১৫টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

স্বতন্ত্র ভোট করবে জামায়াত :  বিএনপি ও তাদের নিবন্ধিত শরিক দলগুলো ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু  জোটের অন্যতম বড় শরিক জামায়াত বিএনপির প্রতীক না নিয়ে স্বতন্ত্রভাবেই ভোটে যাবে।

জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে কী কৌশলে অংশ নেবে সেটা এখনই বলা কঠিন। আসন ভাগাভাগির বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০০৮ সালে বিএনপি আমাদের ৩৪ আসন দিয়েছিল। এবার তার চেয়ে বেশি আসন প্রত্যাশা করছি। দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’

জামায়াতের নিবন্ধন সম্প্রতি বাতিল হয়েছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দল হিসেবে যেমন জামায়াতের নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি তাদের প্রতীক নিয়েও ভোটে দাঁড়ানোর উপায় নেই। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে জামায়াতের কৌশল নিয়ে আলোচনার মধ্যে দলটির শীর্ষ পর্যায় বলছে, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থিতার কৌশলই নিচ্ছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে জামায়াতের আরেক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা ৩৯টি আসনে নির্বাচন করেছিলাম। তখন বিএনপি জোট আমাদের ৩৪ আসন ছেড়ে দিয়েছিল। বাকিগুলো আমরা তাদের ছেড়ে দিয়েছিলাম। এবার অন্তত অর্ধশত আসনে আমাদের ভালো প্রার্থী রয়েছেন। সেক্ষেত্রে  জোটের কাছে আমরা ৫০-৬০ আসন চাইব। তারা কতটা  দেবে সেটা দেখতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর