মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

দেশি-বিদেশি ফল চাষে সফল গোলাম মওলা

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

দেশি-বিদেশি ফল চাষে সফল গোলাম মওলা

নতুন মাত্রা বিষমুক্ত বারোমাসি আম ও পেয়ারা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার সৌখিন  চাষি গোলাম মওলা। শিক্ষকতার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ফল চাষ করে রীতিমতো কোটিপতি বনেছেন তিনি। ফল বাগান করেও থেমে থাকেননি। নতুন নতুন জাত তৈরির জন্য গবেষণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। গোলাম মওলা তার ফল বাগানকেই গবেষণাগার হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তার উদ্ভাবনী বারোমাসি পেয়ারা, কুল ও বাতাবি লেবুর (জাম্বুরা) জাত সফলতা পেয়েছে কিন্তু কৃষি গবেষণাগারের অনুমতি না পাওয়ায় এখনো তার উদ্ভাবিত জাতের নামকরণ করতে পারেননি। তবে তার উদ্ভাবিত জাতের পেয়ারার নাম দিয়েছেন বাংলা পেয়ারা। তার উদ্ভাবিত বারোমাসি পেয়ারা, কুল এবং বাতাবি লেবু চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ায় এলাকার চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা গোলাম মওলার উদ্ভাবিত বারোমাসি পেয়ারা ও বাতাবি লেবুর চারা নিয়ে ফলের বাগান করে সুফলও পেয়েছেন। এ ছাড়া বিষমুক্ত হওয়ায় তার বাগানের পেয়ারা ও বাতাবি লেবুসহ সব ফলের কদরও বেশি। বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর এলাকার মৃত মসলেম উদ্দিনের ছেলে ও নাটোর মহিলা কলেজের কৃষি শিক্ষক কৃষিবিদ গোলাম মওলা বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ শেষে প্রায় সখের বশে ২০০৪ সালের দিকে ২ হেক্টর জমিতে ফলের বাগান করেন। শুরুতেই তিনি ঔষধি গাছের বাগান করেন। এরপর কুল চাষ করেন। এ সময় তিনি গবেষণা করে আলি (আগাম) ভ্যারাইটি জাতের টক-মিষ্টি কুল উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীতে আম, জাম, জামরুল, পেয়ারা, লিচু, কলা, কুল, ড্রাগন, অগ্নিশ্বর চাপা কলা, পারসিমন, বারোমাসি কদবেলসহ সব ধরনের ফল বাগান করেন। বর্তমানে ২১ হেক্টর জমিতে ফল বাগান করেছেন। তার উদ্ভাবিত বাংলা পেয়ারা গাছ লম্বায় অনেক বড় হয়। ফলও বড় হয়। এর একেকটির সর্বোচ্চ ওজন হয় ১৪০০ গ্রাম এবং ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী একটি গাছ থেকে বছরে ১০ থেকে ১৫ মণ পেয়ারা পাওয়া যায়। তার উদ্ভাবিত বাংলা পেয়ারার চারার চাহিদাও বেশি। তার উদ্ভাবিত বাতাবি লেবু খুবই মিষ্টি এবং আকারে বড় হয়। বারোমাসি আমের মধ্যে আগাম জাতের আম সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে পাওয়া যায়। তার বাগানে যে সব জাতের আম রয়েছে তা প্রায় সারা বছর ধরে। এসব আমের মধ্যে রয়েছে বারি-১১, সুইট কাটিমন, চোক আনান, শাহপুরী, গোরমতি, মধুমতি, বান্দিগৌরি, নাক ফজলি প্রভৃতি। এদের মধ্যে থাইল্যান্ড থেকে আনা সুইট কাটিমন ও চোকআনান আম বছরে তিনবার পাওয়া যায়। তিনি বলেন, শরিফার পাঁচটি জাত নিয়ে কাজ করছেন। থাইল্যান্ডের রাম্বুতান চাষ করার পরিকল্পনা নিয়ে গবেষণা করছেন। তার এই বাগানটিতে তিনি ফল চাষের পাশাপাশি দেশি ও বিদেশি জাতের বিভিন্ন ফল নিয়ে গবেষণা করে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষিবিদ গোলাম মওলার বাগানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফল রয়েছে। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার প্রয়োগের কারণে বিষমুক্ত ফল পাওয়ার নিশ্চিয়তা রয়েছে এখানে। স্থানীয় কৃষক মাহতাব আলী ও সমশের আলী বলেন, এখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফল ও ফলের চারা পাওয়া যায়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে এখান থেকে ফল ও চারা নিয়ে যায়। বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোমরেজ আলী বলেন, কৃষিবিদ গোলাম মওলার বাগানে বারোমাসি আম, পোয়ারা, সিডলেস লেবু ও ড্রাগনসহ দেশি-বিদেশি অনেক নতুন নতুন ফলের গাছ রয়েছে। তার বাগানে অর্গানিক ফার্টিলাইজার ব্যবহার করে। যার কারণে তার বাগান থেকে বিষমুক্ত ফল পাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর