বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সেই নাফ দিয়েই ফিরবে রোহিঙ্গারা

বৈশ্বিক আপত্তি কাটিয়ে কাল শুরু হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। প্রক্রিয়া জটিল তবে প্রস্তুত বাংলাদেশ : পররাষ্ট্র সচিব

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সেই নাফ দিয়েই ফিরবে রোহিঙ্গারা

নাফ নদ হয়ে এভাবেই প্রবেশ করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা — ফাইল ফটো

মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার দেশে ফেরার প্রক্রিয়া আগামীকাল শুরু হচ্ছে। বহুল প্রত্যাশিত এ প্রক্রিয়া স্বল্প পর্যায়ে হলেও এটি শুরু করতে ইচ্ছুক বাংলাদেশ। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে দুই হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করার। যে নাফ নদ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল সেই নাফ দিয়েই নৌপথে ফেরার প্রক্রিয়া ঠিক করেছে মিয়ানমার। প্রতিদিন কতজন করে ফিরতে পারবে এবং কখন কখন ফিরবে তা নির্ভর করবে সাগরের জোয়ার-ভাটার ওপর। যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সড়কপথে ফেরানোর বিষয়টিতে জোর দেওয়া হচ্ছে এখনো। এখনই রোহিঙ্গাদের না ফেরানোর বিষয়ে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হলেও প্রক্রিয়া শুরু করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। তবে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক গতকাল বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে দুই দেশ (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) মিলে একটি সময় ঠিক করেছি। সে অনুযায়ী কাজ করছি। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। তবে রোহিঙ্গারা রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত যাবে এটাই স্বাভাবিক।’ বৃহস্পতিবার প্রক্রিয়া শুরু হবে কিনা এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও সচিব বলেছেন, ‘আমরা আশাবাদী। আমরা চেষ্টা করছি, রোহিঙ্গারা সড়কপথে যাবে।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ লুইনের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশ মিয়ানমার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে ঠিক হওয়া প্রক্রিয়া অনুসারে প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, নৌপথে বৃহস্পতিবার থেকে একটানা ১৫ দিন প্রথম ব্যাচের ফেরত যাওয়া চলবে। প্রথম ব্যাচে ২ হাজার ২৬১ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমার ফিরে যাবে। কক্সবাজারের একাধিক শিবির থেকে প্রতিদিন দেড় শ জন করে রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। জোয়ার-ভাটার ওপর এ সংখ্যা ও তাদের সময় নির্ভর করবে। এরই মধ্যে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের বসবাসের জন্য ভারত সরকার রাখাইন রাজ্যে ২৮৫টি বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে। আর চীন সরকার ১ হাজার বাড়ির কাঠামো পাঠিয়েছে, যেগুলো সংযোগ করলেই পূর্ণ বাড়িতে রূপ নেবে। অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশে টেকনাফের কেরুনতলী ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে পৃথক দুটি অন্তর্বর্তীকালীন শিবির তৈরি করা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, মিয়ানমারের কথা দিয়েও কথা না রাখার ইতিহাস অনেক পুরনো। নানান সময়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদেও ফেরানোর কথা জানানো হলেও তাদের টালবাহানার শেষ নেই। গত ৩০ অক্টোবর ঢাকায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের পর মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মন্ট সোয়ে বলেন, ‘আমাদের দুই পক্ষেরই রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে এবং আমরা দুই পক্ষই দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই।’

স্থগিত চায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ : অবিলম্বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনা স্থগিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। ব্রাসেলসে পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং করে ৮ পৃষ্ঠার একটি বিবৃতি দিয়েছে ক্রাইসিস গ্রুপ। এতে যতক্ষণ পর্যন্ত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয় এবং তারা স্বেচ্ছায় ফিরতে না চায় ততক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনা স্থগিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও অন্য দেশগুলোর প্রতি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত করতে বলল জাতিসংঘ : এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত করতে এবার বাংলাদেশকে আহ্বান জানালেন খোদ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের প্রধান মিশেল ব্ল্যাশেলেট। আগামীকাল বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রাক্কালে গতকাল সন্ধ্যায় জেনেভা থেকে এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর