শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সোলার প্যানেলে ল্যাম্পপোস্ট

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

সোলার প্যানেলে ল্যাম্পপোস্ট

সন্ধ্যা হলেই নেমে আসত ঘুটঘুটে অন্ধকার। বাতাসের শনশন আর ঝিঁঝি পোকার শব্দে যেন গা ছমছম করে রোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হতো। আর অন্ধকারে প্রতিনিয়ত চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটত। এমন দৃশ্য নওগাঁ সদর উপজেলার তালতলী থেকে দুবলহাটি হয়ে কাটখৈইর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তায়। এলাকাবাসীর এমন অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প উদ্যোগ বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সূর্যের আলো কাজে লাগানো। আর বিকল্প হিসেবে দিনের সূর্যের আলোকে সোলার প্যানেলে ধারণ করে রাতে ল্যাম্পপোস্টের (সড়কবাতি) মাধ্যমে আলো দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ রাতের বেলায় দিনের সূর্য। আর এ সোলার প্যানেলের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় উপকৃত হচ্ছেন এলাকাবাসী ও পথচারীরা। ফলে রাস্তায় কমেছে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ। তবে অপরাধ ঠেকাতে রাস্তায় পর্যাপ্ত সোলার প্যানেল ল্যাম্পপোস্টে স্থাপন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকাবাসী ও সচেতনরা। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসসূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলায় টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০ কোটি ৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয়ে সোলার প্যানেল ও রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ৩২০ টাকা ব্যয়ে ২২৮টি সোলার প্যানেল ল্যাম্পপোস্টে স্থাপন করা হয়েছে। তবে এ উপজেলার তালতলী থেকে দুবলহাটি হয়ে কাটখৈইর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তায় ১৯০টি সোলার প্যানেল ল্যাম্পপোস্টে স্থাপন করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর চুরি ও ছিনতাইর ভয়ে ছয় মাস আগে তালতলী দীঘলির বিল থেকে দুবলহাটির গুটার বিল হয়ে কাটখৈইর বাজার পর্যন্ত মানুষ এ রাস্তা দিয়ে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া চলাচল করত না। এতে রাতের অন্ধকারে পথ চলতে সমস্যায় পড়তে হতো পথচারীদের। কিন্তু সে দৃশ্য এখন পাল্টিয়ে দিয়েছে সরকার থেকে দেওয়া সোলার প্যানেলের ল্যাম্পপোস্টের আলোয়। সন্ধ্যা হলেই নিজ থেকে জ্বলে ওঠে নির্দিষ্ট দূরত্বে স্থাপন করা ১৯০টি ল্যাম্পপোস্টের বাতি। চলে সকাল পর্যন্ত। শুধু রাস্তাঘাটই নয়; হাটবাজার ও জনবহুল স্থানগুলোয় ল্যাম্পপোস্টের মাধ্যমে আলোকিতকরণ করা হয়েছে। মানুষ এখন যে কোনো সময় নির্দ্বিধায় রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারছে। রাস্তায় কমেছে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ ও দুর্ঘটনা। আবার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ভ্রাম্যমাণ দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন অনেকে। অটোরিকশা চালক জালাল হোসেন বলেন, একসময় এ রাস্তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সন্ধ্যার পর মানুষ ভ্যান ও গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে পারত না। রাস্তায় বাতি দেওয়ার পর থেকে আলোকিত হয়েছে। চুরি ও ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটছে না। যে কোনো সময় যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করা যায়। দুবলহাটি গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, রাস্তায় আগে অন্ধকার ছিল। বিশেষ করে রাস্তার বাঁকগুলোয় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটত। রাস্তায় বাতি দেওয়ার পর থেকে তেমন আর দুর্ঘটনা ঘটছে না। নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এ হায়াত বলেন, বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে এর চাহিদা মেটাতে সোলার প্যানেল বা সৌর প্যানেল সরবরাহ করা হচ্ছে।

উপজেলার রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে আলোকিতকরণ করা হয়েছে। সোলার প্যানেলে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করায় অপরাধপ্রবণতা কমেছে।

সর্বশেষ খবর