মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

থানা পুলিশের তথ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

থানা পুলিশের তথ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা

সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের দেওয়া তথ্যানুসারে নির্বাচনের সময় ভোট গ্রহণে দায়িত্ব পালন করতে পারেন- এমন সম্ভাব্য শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তার তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রায় ১০ দিন আগে থানা পুলিশ ওইসব ব্যক্তির তথ্য যাচাই-বাছাই করে একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে। আবার গত ৮ নভেম্বর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকেও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিয়োগদানের লক্ষ্যে তালিকা জমা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে।

তবে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের পৃথক তালিকা করার বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি লালমনিরহাট জেলা নির্বাচন অফিসার, লালমনিরহাট সদর থানা ও কালীগঞ্জ থানার ওসিসহ একাধিক থানার ওসি এবং উপজেলা নির্বাচন অফিসাররা। তবে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসন নিজেদের প্রয়োজনে শিক্ষকদের বিষয়ে তথ্য নিয়ে থাকতে পারেন। এজন্য কমিশন থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয় না। পুলিশ সদর দফতর থেকে বলা হয়েছে, এসব তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে পুলিশকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে পুলিশের কোনো এখতিয়ার নেই। এটি সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার।

তথ্য দেওয়া একাধিক শিক্ষক এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, মাসখানেক আগে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে পাঠায় স্থানীয় নির্বাচন অফিস। এর ১০-১২ দিন পর সেই তালিকা অনুসারে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা শুরু করে থানা পুলিশ। সূত্র জানায়, গত জুলাইয়ে উপজেলা পর্যায়ের নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর পরের মাস আগস্টে শুরু ৪৯৫টি উপজেলায় থাকা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও এনজিওকর্মীদের তথ্য সংগ্রহের কাজ। এসব তথ্য সংগ্রহের পর গত মাসের শুরুর দিকে আবারও তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু করে থানা পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এবারের সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে ৪০ হাজার ১৯৯টি কেন্দ্র হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বুথ হবে ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৪০টি। প্রতি কেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং দুজন পোলিং অফিসার নিয়োজিত থাকবেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনে ৮ লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। আর এসব দায়িত্বে থাকবেন সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক এবং ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। লালমনিরহাট হাতিবান্ধার শাহানুর রহমান নামে এক শিক্ষক জানান, মাসখানেক আগে স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়। ১০ দিন আগে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ওই তালিকায় থাকা শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। কালীগঞ্জের রেজাউল করিম নামে এক শিক্ষক জানান, স্থানীয় নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের দেওয়া তালিকা এবং পুলিশের দেওয়া তালিকা থেকে নির্বাচন কমিশনে কাটছাঁট হয়ে পছন্দমতো ব্যক্তিদের নির্বাচনের প্রায় ৭ দিন আগে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। শেরপুরের মাসুদ হাসান বাদল নামে এক শিক্ষক জানান, থানা পুলিশ শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের রাজনৈতিক পরিচয়, পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয়, অতীতে রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতার বিষয় এবং পূর্বপুরুষদেরও রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চায়। এতে অনেক শিক্ষক আশঙ্কা করছেন ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন শিক্ষক ভোটের দায়িত্বে থাকার সম্ভাবনা নেই। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, যশোর, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, রংপুর, শেরপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও সুনামগঞ্জ জেলার শিক্ষকরা জানান, তথ্য সংগ্রহকালে তাদের হাতে ফরম ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে জানতে চাওয়া হয় তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কিনা, অতীতে ছিলেন কিনা, এমনকি তাদের পরিবারের কোনো সদস্য রাজনীতিতে সম্পৃক্ত কিনা, অতীতে ছিলেন কিনা, থাকলে সেই দলের নাম, পদ, বাপ-দাদার কেউ জড়িত কিনা এমন বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অথচ অতীতে সংসদ নির্বাচনের আগে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে রদবদল হলেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের নিজেদের এবং পরিবারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিস্তারিত তথ্য এভাবে সংগ্রহ করা হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর