সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আড়ালে আবডালে

মির্জা মেহেদী তমাল

আড়ালে আবডালে

সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক এখন তরুণ- তরুণীদের প্রণার ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে এক ধরনের নগ্ন ভয়াবহতা।

নোংরামি আর নগ্নতার উৎস এখন ফেসবুক। এ কারণে ফেসবুকের উপকারিতা এখন চলে গেছে পুরোপুরি পর্দার আড়ালে।

২৪ বছর বয়সী রিয়া খন্দকার (ছদ্মনাম)। রিয়ার মা একজন ব্যবসায়ী। রিয়ার সঙ্গে অনলাইনে পরিচয় হয় শফিকুলের সঙ্গে। অনলাইনে দুজনের পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, ভালোলাগা ও ভালোবাসা। শফিকুল বিভিন্ন সময় রিয়ার সরলতার সুযোগে প্রেমের অভিনয় করে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। রিয়ার ভাষ্যমতে, প্রেমের অভিনয় করে টাকা নিয়ে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে ডেটিং করতে যেত শফিকুল। রিয়ার কাছে ব্যাপারটি ফাঁস হয়ে গেলে শফিকুল অশ্লীল সব গালাগালের সঙ্গে রিয়াকে হুমকি দেয় ফটোশপের মাধ্যমে ছবি নগ্ন করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার। একজনের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম করতে যাওয়ার ব্যাপারটি রিয়া চুপচাপ মেনে নিলেও ফটোশপের মাধ্যমে ছবি বিকৃতি করে নগ্ন করার হুমকি এবং অশ্লীল গালি মেনে নিতে পারেননি রিয়া।

তাই নিজ ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস লিখে ব্যাপারটি ফাঁস করে দেন। রিয়া স্ট্যাটাসে লিখেন, আমি ভালোবেসেছিলাম, সেই ভালো বাসায় খাদ ছিল না। তারপরও আমার ভালোবাসার কারণেই আমিই শুধু গালি খাই। আমি কী চাই? যেদিন আমি জেনেছি আমার কাছ থেকেই টাকা নিয়ে আরেকটা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা, কোন মেয়ে আছে, এ অবস্থায় হেসেখেলে বেড়াবে?’ শিহাব, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। ফেসবুকে গ্রুপ চ্যাটে পরিচয় হয় সামিয়া নামের একটি মেয়ের সঙ্গে। সুন্দরী সামিয়া নিজের পরিচয় দেয় ঢাকার নামকরা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে। গ্রুপ চ্যাট থেকে ফ্রেন্ডলিস্টে। কয়েকদিনের ফেসবুক চ্যাট থেকে স্কাইপে ভিডিও চ্যাটে। ধীরে ধীরে ভিডিও চ্যাট গড়ায় সেক্স ভিডিও চ্যাটে। সামিয়ার সেক্সুয়াল আহ্বানে সাড়া দিতে গিয়ে ওয়েবক্যামের সামনে নিজেকে নগ্ন করে শিহাব। বিভিন্ন সময় সামিয়াকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গিফটও পাঠায়। সামিয়াও এটা পছন্দ হয়েছে ওটা পছন্দ হয়েছে কিনে দাও আবদার করে। বেশ কয়েকবার বিকাশের মাধ্যমে তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা পাঠায় শিহাব। একদিন এক দুই নয় ৫০ হাজার টাকা দাবি করে সামিয়া। শিহাবের কাছে ৫০ হাজার টাকা না থাকায় কয়েকদিন পর দেওয়ার কথা বলতেই ক্ষেপে যায় সামিয়া। হুমকি দেয়, একদিনের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা না দিলে তার নগ্ন ভিডিও ফাঁস করার। হতবিহ্বল শিহাব যখন বুঝতে পারে তখন কিছুই করার থাকে না। শেষে ৩০ হাজার টাকায় রফাদফা করে। কিন্তু, সামিয়া কখন আবার নগ্ন ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয় এই ভয় সবসময় তাড়া করে শিহাবকে। ঘুণাক্ষরেও কখনো শিহাব টের পায়নি সামিয়া স্কাইপিতে সেক্স ভিডিও চ্যাট রেকর্ড করে রেখেছে। রিয়া এবং শিহাব দুজনের মধ্যে মিল হলো রিয়া প্রতারিত হয়েছে একজন পুরুষের কাছে। বিপরীতে শিহাব প্রতারিত হয়েছে একজন নারীর কাছে। কিন্তু, ‘দুজনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানটি হচ্ছে, রিয়া সেক্সুয়াল স্ক্যান্ডালের ভয় ছিল না। তাই রিয়া সহজেই একজন ভণ্ডের মুখোশ খুলে দিতে পেরেছে। অন্যদিকে শিহাবের সে সুযোগ নেই প্রতারক সামিয়ার মুখোশ খুলে দেওয়ার। কারণ, যৌনতার ফাঁদে ফেলে শিহাবকে নগ্ন করলেও সামিয়া ওয়েবক্যামের সামনে নিজের শরীর মেলে ধরেনি। তাই সামিয়ার প্রতারণার কাহিনী কাছের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করা ছাড়া জনসম্মুখে ফাঁস করার সুযোগ নেই শিহাবের। অনলাইনে প্রতিদিনই এমন ডজন ডজন সর্বনাশা প্রেমের খবর ঘুরে বেড়ায় এ ওয়াল সে ওয়ালে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই সর্বনাশা প্রেম মহামারী আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশেও মহামারীর পর্যায়ে যাচ্ছে ব্যাপারটি। নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে, সামাজিকভাবে বদনাম হওয়ার আশঙ্কায় ৯৫ ভাগ সময় রিয়া, শিহাবরা প্রতারিত হওয়ার কাহিনী ফাঁস করেন না। সাহসী হয়ে কোনো রিয়া করে ফেললেও তাতেই বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আড়ালে আবডালে প্রতিদিন কত ঘটনা শত শত তরুণ-তরুণীর জীবনে অন্ধকার ডেকে আনছে তা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর