শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আগের চেয়ে চ্যালেঞ্জের হবে পররাষ্ট্রনীতি

—ড. দেলোওয়ার হোসেন

আগের চেয়ে চ্যালেঞ্জের হবে পররাষ্ট্রনীতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেনের মতে, নতুন সরকারের জন্য পররাষ্ট্রনীতি হবে সাম্প্রতিক যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের। যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, চীন, জাপান, ভারতের পারস্পরিক সম্পর্কের নতুন প্রেক্ষাপটের কারণেই এই চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন তিনি। গতকাল বাংলাদেশ   প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন। ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ব্রেক্সিটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার পরের পরিস্থিতি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেখানো জুজুর ভয়ের বাস্তবায়নের শুরু, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক লড়াই, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র টানাপড়েন ইত্যাদি মিলিয়ে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নতুন এক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এক সময়ের সংরক্ষণবাদ আবার মুক্তবাণিজ্যের পথ আটকে দিতে যাচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্রই এখন আবার বাজার নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ধাক্কা অবশ্যই বিশ্বের প্রতিটি দেশকে মোকাবিলা করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কূটনীতি যথেষ্ট সক্রিয় হলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত দেওয়ার বিষয়ে অগ্রগতি আনতে রাশিয়া ও চীনের অবস্থানকে পরিবর্তনও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা চুক্তিসহ অন্যান্য ইস্যুর সমাধানও একটা বিষয়। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশ যেভাবে পররাষ্ট্রনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেটি হয়তো মোটা দাগে সঠিকভাবে যাচ্ছে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে নতুন পরিস্থতিতিতে ভারত-চীনের প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারসাম্যের কূটনীতি বাংলাদেশের জন্য মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা দেবে। চীনের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়গুলোকে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারে রাখলেও চীনের সঙ্গে বৈরিতায় থাকা রাষ্ট্রগুলো এটিকে কীভাবে  নেবে তা নির্ভর করবে বাংলাদেশের কার্যকর কূটনীতির ওপর। অর্থনৈতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন আসছে তার বেশিরভাগই বাংলাদেশের প্রতিকূলে যাচ্ছে, তাই এ প্রতিকূলতা মোকাবিলাতেও বাংলাদেশকে নতুন করে ভাবতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে থাকার পরও মিয়ানমার ও বে অব বেঙ্গলকে কেন্দ্র করে নতুন যে কৌশলগত হিসাব নিকাশ হচ্ছে, তার বাস্তবতায় বাংলাদেশকে তৈরি থাকতে হবে। নতুন যে সরকারই আসুক তাকে এর মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন হবে প্রো-অ্যাকটিভ ডিপ্লোমেসি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামনে আরও একটি নতুন বাস্তবতা হলো স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ আগের অনেক সহযোগিতা ও কোটা হারাতে পারে। তখন বৈশ্বিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নতুন চেহারা ধরে রাখতে হবে কূটনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমেই। কূটনৈতিকভাবেই রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করে উন্নত অর্থনীতিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা এগিয়ে নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর