রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটের হাওয়া সারাদেশে

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই পাল্টে দেবে সিপিবি

ইশতেহার ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষমতায় গিয়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পাল্টে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ‘ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ বাস্তবায়নে কাস্তে মার্কায় ভোট চেয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দেশের প্রধান এই বামপন্থি দলটির একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে রুটি-রুজি অধিকারের জন্য শোষণ ও বৈষম্যহীন ইনসাফের সমাজ গড়ার ডাক দেওয়া হয়েছে। সিপিবি বলেছে, ‘এক ভাগ’ মানুষের পকেট ভরার তথাকথিত উন্নয়নের মডেল পরিত্যাগ করে, গণতন্ত্রকে ধারণ করেই ‘নিরানব্বই ভাগ’ মানুষের অংশগ্রহণে ও স্বার্থে সমাজতন্ত্র অভিমুখীন উন্নয়নধারার ‘বিকল্প পথ’ অনুসরণ করা আজ অপরিহার্য কর্তব্য হয়ে উঠেছে। গতকাল পুরানা পল্টনে কমরেড মণি সিংহ সড়কের মুক্তিভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১ বাস্তবায়নে কাস্তে মার্কায় ভোট দিন’ শীর্ষক ইশতেহার প্রকাশ করেছে সিপিবি। দলের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ইশতেহারের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ইশতেহার উপস্থাপন করে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বরং তারা ক্ষমতায় এসে স্বৈরাচারী হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের ধারার বিপরীতে লুটপাটতন্ত্র শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশে এখন মূল দ্বন্দ্ব হলো ‘এক ভাগ’ লুটপাটকারী গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘নিরানব্বই ভাগ’ জনগণের স্বার্থের দ্বন্দ্ব। অথচ এ মৌলিক দ্বন্দ্বকে আড়াল করতে ওই ‘এক ভাগ’-এর স্বার্থরক্ষাকারী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে জনগণের সামনে প্রধান দ্বন্দ্ব হিসেবে বজায় রাখা হয়েছে। এ দুটি রাজনৈতিক দল সমাজের ‘এক ভাগ’ লুটেরা শোষকদের স্বার্থরক্ষাকারী পক্ষের দুটি প্রধান বিবদমান গোষ্ঠী। ইশতেহারে অর্থনৈতিক সংস্কার প্রসঙ্গে বলা হয়, সমবায় ও ব্যক্তিমালিকানা খাতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হবে। ‘কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা স্কিম’ চালু; দরিদ্র, অনাহারী, বেকার, অসহায় মানুষের জন্য ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত; শহর ও গ্রামের মধ্যে সুযোগ-সুবিধার বিদ্যমান বৈষম্য ক্রমান্বয়ে দূর করা হবে। আমূল ভূমি ও কৃষি সংস্কার, গ্রামীণ অর্থনীতি ও গ্রামজীবনের মৌলিক পুনর্গঠন, ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমির বণ্টন, আবাদি জমি সংরক্ষণ, ফসলের লাভজনক মূল্যপ্রাপ্তি, সুলভে কৃষি উপকরণের সরবরাহ, শস্যবীমা চালু, কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়া, এনজিও ঋণ মওকুফ, ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র ও কৃষিপণ্য বিপণন সমবায় স্থাপন করা হবে। কমিউনিস্ট পার্টি বলেছে, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে বিদ্যমান ‘ব্যবস্থা বদল’ করা এবং দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত ছিন্ন করে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি-সমাবেশ গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সিপিবি নতুনের কেতন, তারুণ্যের প্রাণতরঙ্গকে ধারণ করে ‘ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে সিপিবি সংসদ নির্বাচনে ‘কাস্তে’ মার্কার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানায়। দেশের প্রাচীন এই দলের নির্বাচনী ইশতেহার ‘ব্যবস্থা বদল’-এর ৩০ দফা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধান, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাজনীতির সংস্কার সাধন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ, নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, বিকল্প অর্থনৈতিক নীতি ও ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য কমানো, ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যে ভেজাল রোধ করা হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-দুর্বৃত্তায়ন-মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ, কৃষি কৃষক গ্রামীণ মজুরের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়নকরণ, দেশীয় শিল্পের বিকাশ সাধন, শ্রমিক ও কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাত ও চিকিৎসার মানোন্নয়ন করা হবে। যুবসমাজের তারুণ্য-সম্পদকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানো, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধ-দুস্থ নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য রোধ এবং তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন জাতিসত্তা, আদিবাসী সমাজ ও দলিতদের যথাযথ স্বীকৃতি ও অধিকার প্রতিষ্ঠা, শহরের বস্তিবাসী, হকার ও নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন, প্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি ও অধিকার রক্ষা করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সর্বজনীনকরণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষা, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও বিকল্প জ্বালানিনীতির বাস্তবায়ন, পানি উন্নয়ন ও বন্যা সমস্যার প্রতিকার, দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও যানজট রোধ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো, ক্রীড়া-শরীরচর্চা ও বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিতকরণ এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করা।

সর্বশেষ খবর