মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিনা অপরাধে কারাবাস

মির্জা মেহেদী তমাল

বিনা অপরাধে কারাবাস

পুরান ঢাকার মিটফোর্ডের ব্যবসায়ী নাজমুস সাকিব। ব্যবসায়ী বন্ধু ইমরান রহমান সুমনের ডাকে বংশালের একটি হোটেলে গিয়েছিলেন ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনা করতে। আলোচনা শেষে হোটেল থেকে বের হতেই তিনি দেখতে পান বংশাল থানার একদল পুলিশ হোটেলের বাইরে দাঁড়ানো। তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের দল তার পথরোধ করে দাঁড়ায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বংশাল থানার এএসআই শিমুল বিল্লাহ তার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয়। হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। জোর করে বংশাল থানার একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। সাকিব তাকে ধরার কারণ জানতে চায়। অনুনয় বিনয় করেন। কিন্তু কোনো কথাই শোনেনি পুলিশ। তখন পাশেই দাঁড়ানো ছিল তার ব্যবসায়িক বন্ধু ইমরান রহমান সুমন। তিনিও পুলিশকে কিছু বললেন না। সাকিব বার বার জানতে চান, কেন তাকে ধরা হলো। এএসআই শিমুল তাকে হুমকি দেয়, ভয় দেখায়, চুপ থাকতে বলে। কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারে না। শুধু বলে, উপরের নির্দেশ। খুব গোপনে সাকিবকে সারা রাত থানায় আটকে রাখা হয়। থানায় এএসআই শিমুল তার জাতীয় পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়। থানা হাজতে বন্দী অবস্থায় তার ছবি তোলে। হতভাগ্য সাকিব বলেন, রাতে আমার চোখ বেঁধে ফেলে। পুলিশ আমাকে বলে আমি নাকি বিএনপি-জামায়াত করি। আমার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু আমি কোনো দল করি না। ব্যবসা করি। এসব বললেও পুলিশ শুনতে চায়নি। রাতভর চেষ্টা চলে স্বীকারোক্তি আদায়ের। সাকিব বলেন, আমি নিজেও তখন বুঝতে পারছি না কেন আমাকে ধরে নিয়ে এলো। দেশের কোনো থানায় আমার বিরুদ্ধে একটি জিডিও নেই। কিন্তু কেন আমাকে এমন নির্যাতন। সাকিব বলেন, পরদিন সকাল ১০টার পরে ওসি সহিদুর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা হলে তিনি একবার বলেন যে, আমাকে ৫৭ ধারায় ধরা হয়েছে। আরও মামলা হবে। যখন আমি বলি যে আমার বিরুদ্ধে কি মিটফোর্ডের সুমন/জনরা এগুলো করেছে? ওসি প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। উপরন্তু তিনি আমাকে চোরাকারবারি বলেন। আমার পরিবারের লোকজন আসে থানায় দেখা করতে। কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। পরে যখন জানাজানি হয়ে যায়, ওসি সাহেব আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে কেরানীগঞ্জ জেলে প্রেরণ করেন। জেলে থাকা অবস্থায় জানতে পারি যে, আমাকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা (বংশাল থানা-পুরনো মামলা-১৯/০৪/১৫) বা গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি ১২ আগস্ট জেল থেকে বের হই। আমি এখনো আমার মোবাইল এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত পাইনি। জেল থেকে বের হওয়ার পর এখন পর্যন্ত আমাকে ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাভাবিক চলাচলে বাধাগ্রস্ত করছে। এএসআই শিমুল পরবর্তীতে আবারও নভেম্বর মাসে মিটফোর্ড, বাবুবাজারের যেসব দোকানদার আমার মাল কিনেছে তাদের হুমকি দিয়ে আসে এবং ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য করে। তখন আমি নিশ্চিত হই, এটা কাদের কাজ। সাকিব Proding নামে ডায়াবেটিস মেশিন এবং স্ট্রিপস সারা বাংলাদেশে বাজারজাত করে থাকে। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার আই আর এন্টারপ্রাইজ বিভিন্ন কোম্পানির নকল এবং চোরাই মেশিন ও স্ট্রিপ বিক্রি করে থাকে। এরা তার Proding মেশিনের নাম কপি করে চায়না থেকে মেশিন এবং স্ট্রিপ বানিয়ে এনে বাজারে বিক্রি করছে। আমরা এর প্রতিবাদ করলে এ বছরের শুরুতে সে আমাকে আশ্বাস দেয় যে, সে আর ওই নকল মেশিন ও স্ট্রিপ বিক্রি করবে না এবং আমাকে ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু সে মূলত পুলিশকে দিয়ে এই অসাধু কাজ করিয়ে আমার মোবাইল থেকে আসল কোম্পানির ই-মেইল সংগ্রহ করে। কোম্পানিকে এস আই শিমুলের দেওয়া ছবি (থানার সেলের ভিতরে থাকা অবস্থায় এএসআই শিমুল জোরপূর্বক ছবি তোলে) দেখিয়ে মালের শিপমেন্ট নেয়। আমার থানা হাজতের ছবি দেখিয়ে তারা পুরান ঢাকার আরও পার্টিদের চাপ দিয়ে ব্যবসায়িক সুবিধা হাসিল করে। গায়েবি মামলা এখন এভাবেই ব্যক্তিগত আক্রোশে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক শ্রেণির পুলিশের সহায়তায় এভাবেই সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, এভাবে রাজনৈতিক মামলা ব্যক্তিগত আক্রোশে ব্যবহার করা হলে প্রকৃত অভিযুক্তরা রেহাই পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ব্যবসায়ী সাকিব এখন আর ব্যবসা ঠিকভাবে করতে পারছেন না। একটি কল সেন্টারে চাকরি নিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর