নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীতে তাণ্ডব চালিয়েছে শ্রমিকরা। তারা ২০-২৫টি কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ায়। পুলিশ-শ্রমিক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকালের এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ফতুল্লা মডেল থানার ওসিসহ অর্ধশতাধিক লোক। হামলা-ভাঙচুরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের। কয়েকজন শিল্প মালিক জানান, উৎপাদন মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে বিসিকের ফকির অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে গত তিন দিন ধরে অসন্তোষ চলছিল। রবিবার তারা কারখানার অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করে। মালিক পক্ষ সোমবার সকালে বিসিক ও বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষ এবং শ্রম অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এ সময় মঙ্গলবার (আজ) বিভিন্ন কারখানা মালিকের সঙ্গে আলোচনা করে উৎপাদন মজুরি সমন্বয় করার আশ্বাস দেন। শ্রমিকরা তা না মেনে বিসিকের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে পুরো বিসিকে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। তখন বহিরাগত শতাধিক যুবক এসে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিসিকসহ আশপাশের ২০-২৫টি কারখানায় হামলা-ভাঙচুর করে। শিল্প মালিকদের কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বিসিক সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। প্রায় ১০টি কারখানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে, কয়েক দিন ধরে শ্রমিক আন্দোলন চলার কারণে বিসিকে শিল্প পুলিশ ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি ও বিসিক গার্মেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ঘটনাটি পরিকল্পিত। যারা বিসিক এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনি ওইসব শ্রমিক নেতার ইন্ধনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলা-ভাঙচুরে শুধু বিসিকের শ্রমিকরা তা নয়, বাইরের অনেকেও ছিলেন।’ তিনি আরও জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়েছে সেগুলো স্বনামধন্য। যেমন এমএস ডায়িং, ক্রোনি সোয়েটার স্কারলেট, নেভি এমভি, নিট ফ্যাশন। ঘটনার সূত্রপাত ফকির অ্যাপারেলস শ্রমিকদের দাবি, মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের দীর্ঘদিন ধরে দেনদরবার চললেও মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্তই মানছে না। উল্টো তাদের লোকজন শ্রমিকদের নির্যাতন করে। এতে শ্রমিকরা ফুঁসে ওঠে। আন্দোলনরত শ্রমিক ইমন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি। কে বা কারা ভাঙচুর চালিয়েছে আমাদের জানা নেই।’ ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদের জানান, শ্রমিকদের সঙ্গে ফকির অ্যাপারেলস কারখানা মালিকপক্ষের উৎপাদন মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ নবী জানান, পুলিশ আন্দোলনকারীদের থামানোর চেষ্টা করলেও তারা আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আমরা তাদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দিই। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও আহতের সঠিক সংখ্যা পরে জানা যাবে।