শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটের হাওয়া সারাদেশে

বগুড়ার চার এমপির দামি গাড়ি-বাড়ি হলেও বেড়েছে ব্যাংক ঋণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত চার সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থীর লাখ লাখ টাকা, অস্ত্র ও দামি গাড়ি রয়েছে। পাঁচ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জন্য দাখিল করা হলফনামার বিবরণ থেকে দেখা যায় অর্থনৈতিকভাবে সবাই এগিয়েছেন। আর্থিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার কারণে এসব প্রার্থীর রয়েছে লাখ লাখ টাকা, অস্ত্র, গাড়ি ও বাড়ি। এত কিছু থাকার পরও বেশির ভাগ প্রার্থীরই ব্যাংকে ঋণ রয়েছে।

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া-৬ (সদর) নূরুল ইসলাম ওমর ও বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর) অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলতাফ আলী জাপার টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এদের মধ্যে তিনজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং আলতাফ আলী নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হন। এবারের নির্বাচনে এই চার সংসদ সদস্যই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে বগুড়া-৭ আসনে আলতাফ আলীর সঙ্গে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টুকেও রাখা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর কৃষি, বাড়ি ভাড়া এবং ব্যবসা থেকে তার কোনো আয় নেই। অথচ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কৃষি, বাড়ি ভাড়া এবং ব্যবসা থেকে তার আয় ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা। পাঁচ বছর আগে তাঁর কাছে নগদ টাকা ছিল ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এবার তা কমে হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর নগদ ১ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে দেড় লাখ টাকা। অবশ্য আগে ব্যাংকে কোনো টাকা জমা না থাকলেও এখন তাঁর নামে জমা আছে ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ টাকা। ৫ বছর আগে শুধু স্ত্রীর নামে একটি পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি ছিল। এখন সেটিও নেই। তাঁর নিজে ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯১ টাকা মূল্যের ল্যান্ড ক্রুজার কার কিনেছেন। আগে আগ্নেয়াস্ত্র না থাকলেও এখন তিনি একটি পিস্তল এবং একটি মিনি রাইফেলের মালিক। যার মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে তার গাড়ি ও আগ্নেয়াস্ত্র কিনলেও পাঁচ বছরে টিনসেড কাঁচা পাকা বাড়ির কোনো পরিবর্তন হয়নি। স্বামী-স্ত্রীর দুজনের নামেই ৭০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার আগেই ছিল এখনো তাই আছে। ইলেকট্রনিক পণ্য নিজের নামে ৭০ হাজার স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার ও দুজনের নামে এক লাখ ৩৫ হাজার আসবাবপত্র রয়েছে। তবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে তিনি ব্যাংক থেকে ব্যবসা এবং মোটরকার কেনার জন্য ৩৬ লাখ ১৬ হাজার ৭৪২ টাকা ঋণ নিয়েছেন।

বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম তালুকদারের আয় বেড়েছে। পাঁচ বছর আগেও তিনি কৃষি খাত এবং আইন পেশা থেকে আয় করতেন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে ওই দুটি খাতের পাশাপাশি সংসদ সদস্য হিসেবে তার আয় বেড়ে হয়েছে আট লাখ ৯০ হাজার ৪০০ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তার নগদ টাকার পরিমাণ ১৫ গুণ বেড়ে হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। তবে ব্যাংকে জমা করা টাকার পরিমাণ দুই লাখ থেকে নেমে এসেছে এক লাখে। বর্তমান ৩৫ লাখ টাকার মালিক নূরুল ইসলাম তালুকদার ৪২ লাখ টাকা দামের একটি ফ্লাটের মালিক হয়েছেন। অবশ্য আয় এবং সম্পদ বাড়ানোর পাশাপাশি তিনি গৃহনির্মাণের জন্য ৮০ লাখ টাকার ঋণও নিয়েছেন।

বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম ওমরের পাঁচ বছর আগে কৃষি খাত ও ব্যবসা থেকে প্রায় চার লাখ টাকা আয় করতেন। বর্তমানে ওই দুটি খাতে তাঁর কোনো আয় নেই। ২০১৩ সালে ডিসেম্বরে দাখিল করা হলফনামায় তিনি নিজেকে ঠিকাদার পরিচয় দিলেও এবার তিনি পেশা পরিবর্তন করে হয়েছেন সংসদ সদস্য। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ নূরুল ইসলাম ওমরের অবশ্য পাঁচ বছরের ব্যবধানে নগদ প্রায় আট লাখ টাকা বেড়েছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তার নগদ ৪০ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৪ টাকা ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ টাকা। তবে আগে তার স্ত্রীর নামে এক লাখ টাকা থাকলেও এখন তাঁর কাছে নগদ কোনো টাকাই নেই। স্থাবর সম্পদ প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও পাঁচ বছরে ব্যাংক ঋণের অঙ্ক কমাতে পেরেছেন নূরুল ইসলাম ওমর। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকে তার ঋণের পরিমাণ ছিল এক কোটি টাকা। বর্তমানে তাঁর ঋণের পরিমাণ ৬১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৬ টাকা। বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলতাফ আলীর আয় পাঁচ বছরে প্রায় তিনগুণ (৭ লাখ ১০ হাজার টাকা) বাড়লেও তাঁর নিজের এবং নির্ভরশীলদের কাছে নগদ টাকা নেই। অথচ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তার কাছে নগদ এক লাখ টাকা এবং ব্যাংকে ছিল আরও দুই লাখ টাকা। শুধু কী তাই, আগে স্ত্রী এবং নির্ভরশীলদের নামে যে ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল এখন সেটিও নেই বলে এবারে দাখিল করা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তবে নিজের ৩০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও বগুড়া শহরের শিববাটি শাহী মসজিদ লেন এলাকায় আট শতক জায়গার ওপর তার রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি। তা ছাড়া গাবতলী উপজেলার টিওরপাড়া গ্রামে রয়েছে ছয় শতক জায়গার ওপর টিনশেডের একটি আধাপাকা বাড়ি। রয়েছে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ও নিজের কেনা প্রায় ৩০ বিঘা আবাদি জমি। ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তিনি দুটি বাড়ি ও ২০ বিঘা আবাদি জমির থাকার কথা উল্লেখ করেন। তবে এবারের হলফনামায় নিজের স্থাবর সম্পদ বলতে একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন। ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্রও কমেছে তার। পাঁচ বছর আগে তার বাড়ির ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্রের মূল্য ছিল তিন লাখ টাকা কিন্তু এখন তার দাম কমে মাত্র ৫৫ হাজার টাকা। ৪৭ লাখ ২০ হাজার ৩৭৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েও তিনি পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকার ঋণ করেছেন।

সর্বশেষ খবর