শিরোনাম
শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ২৪

ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তুলে ধরতে পারছে না বাংলাদেশ

নিজামুল হক বিপুল, কাতোভিস (পোল্যান্ড) থেকে

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৪) ষষ্ঠ দিনে এসে চলছে বিভিন্ন ইস্যুতে দরকষাকষি। বিশেষ করে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে রুল বুক তৈরি, প্রতিশ্রুত অর্থের দ্রুত বাস্তবায়ন, তাপমাত্রা কমানোর বিষয়ে আইপিসিসির গত অক্টোবরের সর্বশেষ রিপোর্ট বাস্তবায়ন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করাসহ আরও বেশ কিছু ইস্যু। তবে কোনো ইস্যুতেই এখন পর্যন্ত আশানুরূপ অগ্রগতি নেই।

পোল্যান্ডের তৃতীয় বৃহত্তম শহর কাতোভিসে গত ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ২৪তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। গতকাল ছিল সম্মেলনের ষষ্ঠ দিন। এবারের সম্মেলনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্যারিস চুক্তির রুল বুক বাস্তবায়নের ওপর। একসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য গঠিত তহবিলে প্রতি বছর ১০০ কোটি ডলার করে জমা দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি সেই বিষয়েও কোনো অগ্রগতি নেই। আগামী ২০২০ সাল থেকে এই অর্থ তহবিলে দেওয়ার কথা রয়েছে ধনী দেশগুলোর। যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। কিন্তু আমেরিকা, ভারত, চীন, ব্রাজিলসহ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো এই প্রতিশ্রুতিসহ সামগ্রিক বিষয়ে অনেকটা পিছুটান দিয়েছে। এবার এসব দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সৌদি আরবও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্যারিস চুক্তির আলোকে যেসব বিষয়ে বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর বিষয়ে তারা দ্বৈতনীতি গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ সামনে বলছে সব বাস্তবায়ন করা হবে, আবার পেছনে সময়ক্ষেপণ করছে। যার ফলে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার গতি দুর্বল হয়ে গেছে। এদিকে এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতাই দেখা যাচ্ছে না। কারণ পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এবারের সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। তারা সম্মেলন শুরুর দিন কয়েক আগে থেকেই পোল্যান্ডের কাতভিস শহরে আসলেও সম্মেলনের সবকটি ইভেন্টে অংশ নিতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে প্রতি বছর মন্ত্রী ও সচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আসে সেখানে এবার অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আসায় কারও মধ্যেই তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ দলের সমন্বয় সভায় সেই দুর্বলতার চিত্রই ফুটে উঠেছে বিভিন্ন জনের বক্তব্যে। প্রতিনিধি দলের প্রধান অরিক্তি সচিব নুরুল কাদির নিজেই সেই দুর্বলতার কথা প্রকাশ করেছেন। তিনি অনেক কর্মকর্তার নাম ধরে ধরে বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইভেন্টে আপনাদের পাওয়া যায়নি। আপনারা ছিলেন না। এ নিয়ে ক্ষোভ অসন্তোষ রয়েছে। অনেকে বলছেন, এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এসেছে মূলত পিকনিক করতে। অন্যদিকে প্রতি বছরের মতো এবারের সম্মেলনেও বাংলাদেশ একটি প্রদর্শনী স্টল দিয়েছে। তাও আবার জাপানের একটি এনজিওর সঙ্গে যৌথভাবে। এ নিয়ে সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে একরকম ক্ষোভই দেখা গেছে। তারা বলছেন, যেখানে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া থেকে শুরু করে আরও অনেক দুর্বল দেশ প্রদর্শনীতে প্যাভেলিয়ন দিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ শেয়ারে স্টল দিয়েছে, যার আয়তন পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুট। অথচ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। তাদের একটি প্রদর্শনী প্যাভেলিয়ন থাকলে বাংলাদেশের চিত্রটা সম্মেলনে আরও ভালোভাবে ফুটে উঠত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা বাংলাদেশ দলের দুর্বলতার কারণেই হচ্ছে। প্রদর্শনী প্যাভেলিয়ন পেতে হলে আগে থেকেই তৎপর থাকতে হয়। আগাম প্রস্তুতি না থাকায় এবং যথাযথ উদ্যোগের অভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় থাকার পরও বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর