রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পরিবেশ ও খাদ্য আদালত গঠনে ঘোষণা চাই

—ডা. লেনিন চৌধুরী

রুহুল আমিন রাসেল

পরিবেশ ও খাদ্য আদালত গঠনে ঘোষণা চাই

এবার নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে দেশের সব জেলায় পরিবেশ ও খাদ্য আদালত গঠনের স্পষ্ট ঘোষণা চায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন। পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেনিন চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে বনাঞ্চল যেখানে ২৫ ভাগ থাকার কথা, সেখানে আছে ১০ ভাগ। নদী-নালা, খাল বিল দখল হয়ে যাচ্ছে। ভূমি দখলের মধ্য দিয়ে কৃষি জমি কমছে। নদীগুলো নাব্য হারাচ্ছে। ফলে লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। খেলার মাঠ দখল হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিবেশের যে ভয়ানক ক্ষতি হচ্ছে, তাতে মানুষের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ছে। ক্যান্সার, লিভার ও কিডনির অসুখসহ বিভিন্ন প্রকারের রোগ বাড়ছে। মানুষের গড় অসুস্থতাও বাড়ছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনীতিক দলগুলোর ইশতেহারে পরিবেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রত্যাশা নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেনিন চৌধুরী। তার মতে, বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত যে, জলবায়ুর কারণে সৃষ্ট সংকট পৃথিবীকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এই সংকট উত্তরণে প্যারিস চুক্তিতে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের উষ্ণতা শিল্প বিপ্লবের আগের অবস্থান থেকে ৫৫ ভাগ কমিয়ে আনা হবে।  কিন্তু সেটি সফল হয়নি। এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের উষ্ণতা দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০ ভাগ ভূখণ্ড তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পরিবেশ আন্দোলনের এই নেতা বলেন, বর্তমানের হারে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের এক- তৃতীয়াংশ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। স্বাস্থ্য, খাদ্যসহ সমস্ত খাতে বিশাল বিপর্যয় দেখা দেবে। তাই নির্বাচনে আমরা প্রত্যাশা করব নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ করে পরিবেশ রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। তা না হলে সমস্ত উন্নয়ন এবং অর্জন বিপর্যয়ের সে াতে ভেসে যাবে। ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, বন-জলাভূমি দখলকারী, পাহাড় কাটার সঙ্গে সম্পৃক্তদেরসহ পরিবেশ বিনষ্টকারীদের ‘পরিবেশ আদালত’ গঠন করে বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে থাকা প্রয়োজন। এর সঙ্গে নদী পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ গ্রহণসহ প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তারও প্রতিফলন ইশতেহারে চাই।

তিনি বলেন, শহরের পার্ক, খেলার মাঠ পুনরুদ্ধার করে সংরক্ষণ, গ্রামাঞ্চলসহ সারা দেশে শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ আইন ১৯৯৭-এ অনুস্বাক্ষর করা, পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, পানিনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করাসহ পানি উন্নয়ন ও বন্যা সমস্যার প্রতিকার করা দরকার। দুর্যোগ-পূর্ব আধুনিক সতর্কতা-ব্যবস্থা স্থাপন, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, বিশেষায়িত উদ্ধারকর্মী দল গঠন এবং উদ্ধার-সরঞ্জামের আধুনিকায়ন, সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতিসহ দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করা জরুরি।

সর্বশেষ খবর