রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

কয়লা উত্তোলনের শহরেই চলছে কার্বন নিঃসরণ কমানোর দরকষাকষি

নিজামুল হক বিপুল, কাতোভিস, পোল্যান্ড থেকে

বিশ্বের অন্যতম কার্বন নিঃসরণকারী শহর হিসেবে পরিচিত কয়লাখনির জন্য বিখ্যাত পোল্যান্ডের কাতোভিস শহরেই চলছে তাপমাত্রা, কার্বন নিঃসরণ ও গ্রিনহাউস গ্যাসের উদিগরণ মাত্রা কমানোর দরকষাকষি। ২৪তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৪) অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত এবং স্বল্পোন্নত দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা দাবি জানিয়েছেন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ভবিষ্যতে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে। এ জন্য ধনী দেশগুলোকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। ‘প্যারিস রুল বুকে’ (প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত শর্তসমূহ) বিপদাপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইক্যুইটিবিডির নীতি গবেষক সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নেতাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে শিথিলতার কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ইতিমধ্যে ০.৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হয়েছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব প্রকট হচ্ছে। এ কারণেই আইপিসিসির (ইন্টারন্যাশনাল প্যানেলিস্টস ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঠেকাতে বিশ্ববাসীকে এখনই একযোগে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে উপকূলীয় নারী ও মেয়েশিশু মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে ২০১০ সালের তুলনায় ৪৫% হ্রাস করতে হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে তা শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। আর ২ ডিগ্রির মধ্যে এই বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ রাখতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে তা ২০% হ্রাস করতে হবে। ধনী দেশগুলোকে তাপমাত্র বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যাপারে আইপিসিসির কৌশল অবলম্বনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে জাতীয় নীতি প্রণয়নে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে ঝুঁকি প্রশমনে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে ধনী দেশগুলোকেই। তারা বলছেন, আইপিসিসি ইতিমধ্যে তাদের ১.৫ ডিগ্রি-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ধনী দেশগুলোর জন্য অনেকগুলো করণীয় তুলে ধরেছে। এখন দরকার এ ব্যাপারে আক্রান্ত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দাবি জোরদার করা। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রির নিচে রাখার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে ধনী দেশগুলোকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। আর ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ব্যাপারে প্রণোদনা বজায় রাখতে হবে এবং এটি খুবই সম্ভব। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি আটলি সোলবার্গ বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে চলমান উদ্বাস্তু সমস্যার বিষয়টি উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে এবং ২৪তম জলবায়ু সম্মেলনে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্বাস্তুতার ঝুঁকি কমাতে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু অর্থায়নে পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখার ব্যাপারে ধনী দেশগুলোর দায়িত্ব রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে ভুক্তভোগী মানুষের জন্য মাত্র ৬.৬ বিলিয়ন ডলারের জোগান রয়েছে, যা খুবই অপ্রতুল। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দুর্যোগ মোকাবিলায় বড় বাজেট দরকার, যার অভাবে তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাজেই উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু বিষয়ে যথাযথ অর্থায়নের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। জলবায়ু তহবিলের নামে উন্নয়ন সহায়তা তহবিল (ওডিএ) চালিয়ে দেওয়া যাবে না।

সর্বশেষ খবর