সোমবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
অধিকার আদায় করতে গিয়ে যেন অশান্তি না হয় : প্রধানমন্ত্রী

রোকেয়া পদক পেলেন পাঁচজন

প্রতিদিন ডেস্ক

রোকেয়া পদক পেলেন পাঁচজন

রাজধানীতে গতকাল বেগম রোকেয়া পদক জয়ীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারীদের অধিকার আদায় করে নেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিকার আদায় করতে গিয়ে যেন পরিবারে কোনো অশান্তি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে ‘রোকেয়া পদক-২০১৮’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা এ পরামর্শ দেন। খবর : বাসসর। অনুষ্ঠানে এ বছর নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের বিশিষ্ট ৫ জন মহিলাকে বেগম রোকেয়া পদক-২০১৮ তে ভূষিত করা হয়। পদকপ্রাপ্তরা হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেবুন্নেসা তালুকদার, কুমিল্লা মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক জোহরা আনিস, সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মী শিলা চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখিকা এবং সমাজকর্মী রমা চৌধুরী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লেখিকা ও সমাজকর্মী রোকেয়া বেগম।

এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরকে উদ্ধৃত করে বলেন, অধিকার আদায় করে নিতে হয়। অধিকার অর্জন করে নিতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে এটুকু বলব, অধিকার আদায় করতে গিয়ে সংসারে যেন ঝামেলা না হয়, অশান্তি না হয়।  সেটাও দেখতে হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী মাতা-পিতাকে বিশেষ করে মায়েদের তাদের সন্তানকে বেগম রোকেয়ার আদর্শে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের নারীরা সুশিক্ষিত হবে এবং নিজের সন্তানকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদক থেকে ছেলেমেয়েরা যেন দূরে থাকে সেজন্য মায়েদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।’ তিনি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কোনো দূরত্ব না রেখে বরং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য মায়েদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘যাতে করে কোনো সমস্যা হলেই ছেলেমেয়েরা তাদের নিজেদের মনের কথা মাকে বলতে পারে। কারণ মা-বাবাই হচ্ছে সন্তানের সব থেকে বড় বন্ধু। কাজেই সেই ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ মাকেই নিতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বেগম রোকেয়াকে নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং সত্যিকারের প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব আখ্যায়িত করে বলেন, ‘বেগম রোকেয়া আমাদের যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন এবং তাঁর যে স্বপ্ন ছিল আজকে কিন্তু পৃথিবী সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে এদিকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি।’ তিনি এ সময় নারী জাগরণে বেগম রোকেয়ার একটি বাণী প্রণিধানযোগ্য উল্লেখ করে বলেন, ‘পুরুষের সক্ষমতা লাভের জন্য আমাদের যা করিতে হয় তাই করিব। যদি এখন স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয় তবে তাহাই করিব।’ ‘কাজেই তাঁর এই কথাটা আমাদের মনে রাখতে হবে এবং আজকে যদি আমরা বাংলাদেশের দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখব তাঁর এই আহ্বানটা বৃথা যায়নি,’ যোগ করেন তিনি।

 সরকারপ্রধান এ সময় নারীর প্রগতির জন্য বেগম রোকেয়া পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তাঁর সরকার দেশ পরিচালনা করছে এবং করবে বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৪০ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, এভারেস্ট বিজয় থেকে শুরু করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের কর্মকাণ্ডে নারীরা সাফল্যের সঙ্গে ভূমিকা রাখছেন। অর্জন করছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মাননা। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, এদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলের নেতা এবং সংসদ উপনেতা এই চারটি পদেই নারীরা আসীন, যার নজির বিশ্বে বিরল। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জীবনাদর্শ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাংলার মুক্তির সংগ্রামে অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালনকারী বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী এবং নিভৃতচারিণী বেগম মুজিবের জীবনের বহু দিকও আলোচনায় তুলে আনেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবার রাজনৈতিক জীবনে আমার মা ছিলেন একজন উপযুক্ত সাথী। যিনি সব সময় বাবার পাশে থেকে তাঁকে প্রেরণা যুগিয়ে গেছেন।’ সংসারের কোনো রকম অভাব- অভিযোগের কথা তাঁর পিতাকে বলে তাঁর মা কখনো তাঁকে বিব্রত করেননি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতার বক্তব্য ‘মেয়েরা যদি কামাই করে ১০টা টাকা আঁচলে বেঁধে ঘরে আনে তাহলে ওই সমাজ বা সংসারে তাঁর একটা জায়গা থাকে। কথা বলার সুযোগ থাকে’ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর নারীরা তা করতে না পারলে তাঁর অবস্থান সমাজ কিংবা সংসার কোথাও থাকে না। আর এটাই হচ্ছে প্রকৃত বাস্তবতা। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁর সরকার চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে যে সুযোগটা করেছে তার সুফল নারী সমাজ ভোগ করছে। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতার শেষ দিকে গতকাল ৯ ডিসেম্বর দিনটি তাঁর কন্যা এবং বিশ্ব অটিজম আন্দোলনের অগ্রসেনানি সায়মা হোসেনের জন্মদিন উল্লেখ করে তাঁর জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর