সোমবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুই-সিরিঞ্জে ভয়ঙ্কর নেশা

মির্জা মেহেদী তমাল

সুই-সিরিঞ্জে ভয়ঙ্কর নেশা

দুপুর দেড়টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সি গেটের পাশের ফুটপাথ। এক রিকশাচালক রিকশা থামিয়ে সিটের নিচ থেকে সুই-সিরিঞ্জ বের করলেন। এরপর একটি প্যাথেডিন অ্যাম্পুুুল ভেঙে তা থেকে ইনজেকশন নিয়ে নিজের শিরায় পুশ করেন। বাকি অর্ধেক পাশে থাকা আরেকজনকে দেন। একই সুই দিয়ে ওই ব্যক্তি নিজের শরীরে পুশ করে ইনজেকশনের বাকিটুকু। সেখানেই তারা বসে পড়লেন। হাতে তাদের সিগারেট। রিকশাচালকের নাম ইব্রাহীম। তার সঙ্গে যিনি প্যাথেডিন নিলেন তার নাম শরবত গাজী। এমন দৃশ্য শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেটেই নয়, তা দেখা যায় পুরান ঢাকার নয়াবাজার, আনন্দবাজার, মিটফোর্ড, কসাইটুলী, ঢাকা মেডিকেল এলাকা, চানখাঁরপুল, নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেট, মিরপুরের তালতলা, তেজগাঁও রেললাইন, সিটি ধলপুর, ফতুল্লা, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, হাজারীবাগ পার্ক, লালবাগ ও পোস্তগোলা ব্রিজসহ রাজধানীর অর্ধশতাধিক স্থানে। এরা সবাই মাদকসেবী। এদের অধিকাংশের শরীরে দগদগে ঘা। সুইয়ের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায় রোগজীবাণু। এসব সুই একাধিকজন ব্যবহার করে। রাজধানীর অন্তত অর্ধশতাধিক স্পটে চলে সুই-সিরিঞ্জের ভয়ঙ্কর নেশা। প্যাথেডিন ও লুপিজেসিক ইনজেকশন নেশাখোরদের প্রধান আকর্ষণ। কারণ অন্য মাদকের চেয়ে এসবের দাম কম। সুই-সিরিঞ্জের এই ভয়ঙ্কর নেশায় আসক্ত ছিন্নমূল মানুষ। কম দামে পাওয়ায় এরা এই নেশার প্রতি ঝুঁকছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ নেশার পরিণতিও ভয়ঙ্কর। আসক্তদের ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়। বাঁচার কোনো পথ নেই। এই পদ্ধতিতে মাদক গ্রহণকারীদের কেউ বহন করছে এইচআইভি জীবাণু, কেউ ভুগছে নানা জটিল রোগে। রাজধানীর পুরান ঢাকায় রাস্তার পাশে কিংবা অলিগলিতে দেখা যায় এ ধরনের আসক্তদের। সুইয়ের মাধ্যমে প্যাথেডিনসহ নানা ধরনের নেশাজাত ইনজেকশন গ্রহণ করায় তাদের হাত-পায়ে দগদগে ঘা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছরে বিভিন্ন ফুটপাথ থেকে ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে; যাদের অধিকাংশই মাদকসেবী। মৃতদেহগুলো আঞ্জুমানের মাধ্যমে দাফন করা হয়। ভাসমান মাদকসেবীর সংখ্যা এতটাই বাড়ছে যে এদের তাড়ানোও যাচ্ছে না।

প্যাথেডিন আসক্ত কবির ভাঙ্গারি কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি জানান, চানখাঁরপুল এলাকায় কয়েকজন ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী ব্যবসার আড়ালে প্যাথেডিন বিক্রি করেন। তারা আগাম প্যাথেডিন দেন। পরে ভাঙ্গারির বিনিময়ে টোকাইরা মাদকের দাম পরিশোধ করে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান জিরো টলারেন্সে। প্রতিদিনই রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। মাদকসহ গ্রেফতার করা হচ্ছে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর