শিরোনাম
শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ছদ্মবেশী প্রেমিক

মির্জা মেহেদী তমাল

ছদ্মবেশী প্রেমিক

অনামিকা (ছদ্মনাম) মেডিকেলে ভর্তির জন্য কোচিং করছেন ঢাকায়। গুলশানে এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে কোচিং করেন। এরই মধ্যে ফেসবুকে পরিচয় এক তরুণের সঙ্গে। পরিচয় থেকে বন্ধুতা। তারপর প্রেম। চুটিয়ে প্রেম করেছেন কয়েক মাস। সুযোগ পেলেই লং ড্রাইভে চলে যেতেন দুজন। একসঙ্গে সময় কাটাতেন। ছবি তুলতেন। এমনকি ছেলেটির পরিচিত একটি বাসায় প্রায়ই মিলিত হতেন তারা। এর মধ্যেই ঢাকার বাইরে একটি মেডিকেলে ভর্তি হন ওই ছাত্রী। আগের চেয়ে খুব কম দেখা হয় দুজনের। তাতে কী।

ফোন, ইমো, মেসেঞ্জার তো আছে। দেখাদেখি হয় ভিডিওকলে। কখনো কখনো তরুণী নিজেই ছুটে আসেন ঢাকায়। সেদিন দুজনে আগের মতো ঘুরে বেড়ান। একদিন সকাল থেকে ছেলেটির কোনো খোঁজ নেই। ফোনে পাচ্ছিলেন না অনামিকা। সারা দিনে একবারও না। বাধ্য হয়েই রাতে কল দেন। তখন গভীর রাত। কলটা রিসিভ হয়। কিন্তু চিকিৎসক তরুণীকে চমকে দিয়ে ওই প্রান্ত থেকে ভেসে আসে একটি নারী কণ্ঠ। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমি তার স্ত্রী বলছি। আপনি কে? এত রাতে কেন কল দিয়েছেন?’ তারপর আর সহ্য করা সম্ভব হয়নি। লাইন কেটে দেন অনামিকা। যদিও তখনো বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মধ্যেই ছিলেন তিনি। বিষয়টি আরও যাচাই করতে পরদিন ওই তরুণের এক বন্ধুকে কল দেন। যার সঙ্গে এর আগে প্রেমিকের মাধ্যমেই পরিচয়। এমনকি একাধিকবার সাক্ষাৎও হয়েছে। ফোন নম্বর ছিল না। তবে ফেসবুকের মাধ্যমে তা সংগ্রহ করেন। রাতের ঘটনার সত্যতা পান অনামিকা। তার প্রেমিক বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। মিথ্যা পরিচয়েই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাদের। অনামিকা বেশ কয়েকদিন ফোন বন্ধ করে বাসায় বন্দীজীবন কাটান। ফোনটি খোলার পর প্রেমিকের ফোন। তিনি সম্পর্ক রাখতে চান। বিয়ের দরকার নেই। অনামিকা জানিয়ে দেন, কোনোভাবেই তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়। তার পর থেকেই হুমকি-ধমকি দিতে থাকে ছেলেটি। ফোনে, মেসেঞ্জারে একই হুমকি। সম্পর্ক না রাখলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি, ভিডিওগুলো ফেসবুকে, ইউটিউবে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। অনামিকা এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরি নিয়ে তিনি যান সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইউনিটে। নিজের অভিযোগ লিখে সাধারণ ডায়েরিটি সংযুক্ত করে দেন। সঙ্গে ফেসবুকে, মেসেঞ্জারের কিছু স্ক্রিনশট। তবে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা তাকে সাহস দেন। আশ্বাস দেন যে কোনোভাবেই আসামিকে গ্রেফতার করা হবে। তরুণী বার বার অনুরোধ করছেন কোনোভাবেই যেন বিষয়টি বাইরের কেউ না জানেন। চিকিৎসক তরুণীর মা পুরো বিষয়টি জানলেও বাবাকে জানানো হয়নি। এমনকি পরিবারের আর কাউকেই তা জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সাহস দেন। ভয় নেই, কাউকে জানানো হবে না।

একইভাবে ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে বার বার হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। তারপর সমঝোতার নামে ডেকে নিয়ে একটি বাসায় ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এ বিষয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি মামলাও হয়েছে। সম্প্রতি সিটিটিসির অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে দিদার মুন্সী নামক এক প্রতারক। মিথ্যা পরিচয়, প্রলোভন দিয়ে এক কলেজছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে দিদার। তারপর শারীরিক সম্পর্ক। মুখোশ উন্মোচন হলে মেয়েটি তার থেকে দূরে সরে যেতে চাইলেই দেওয়া হয় হুমকি-ধমকি। একপর্যায়ে ফেসবুক, মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের অন্তরঙ্গ ছবি। এমনকি গোপনে ধারণ করা ভিডিওচিত্রও ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন জনের কাছে। দিদার মুন্সীকে গ্রেফতারের পর প্রাণ ফিরে পায় মেয়েটি। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিনই এ রকম অভিযোগ আসছে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কাছে। সামাজিকতার কারণে নির্যাতিতা তার পরিচয় গোপন রাখতে চান। এমনকি বিষয়টি বাইরের কেউ জানুক তা চান না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মামলা ছাড়াও অনেককে সহযোগিতা করি। অভিযোগকারীদের মধ্যে মামলা করতে চান খুবই কম। তাদের হার ৩০ ভাগের বেশি নয়। তবে এসব ঘটনার আগে কার সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হচ্ছে, সে বিষয়ে সচেতন হলে হয়তো এত দূর আসতে হতো না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর