শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এক নম্বরে অনেক ফোন

মির্জা মেহেদী তমাল

এক নম্বরে অনেক ফোন

খুনির খোঁজ মিলছে না। পুলিশ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কোনো ভাবেই খুনির নাগাল পাচ্ছে না পুলিশ। বেশ কয়েক মাস পর খুনির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ খুনির অবস্থান জানতে পারে। সিলেটে অভিযান চালায় পুলিশ। সিলেট শহর থেকে সেই সন্দেহভাজন খুনিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কর্মকর্তাদের মুখে তখন হাসির ঝিলিক। খুনিকে পুলিশ জেরা করে। কিন্তু একি! খুনির সঙ্গে এই ব্যক্তির কোনো কিছুই মিলছে না। কোনো কিছুই বলতে পারছে না সেই সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি। পুলিশ এই ব্যক্তির সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করে। পুলিশ নিশ্চিত হয়, এই ব্যক্তি খুনি নয়। পুলিশের মনে তখন নতুন এক প্রশ্ন। খুনি যদি এই ব্যক্তি না হয়, তবে খুনি কে? মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বরের সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হলো। কিন্তু একই আইএমইআই নম্বরের আরও একটি মোবাইল ফোন সচল রয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়। এবার পুলিশ মোবাইল ফোন সেট নিয়ে মাঠে নামে। তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ জানতে পারে, একই আইএমইআই নম্বরের অনেক মোবাইল ফোন সেট ব্যবহৃত হচ্ছে। অপরাধী শনাক্তের সময় অনেক ক্ষেত্রেই এমন বিপত্তির সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, নকল মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে সৃষ্টি হয়েছে নানাবিধ সমস্যাও।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নকল মোবাইল ফোন টিকে কম সময়। ফলে বিপুল পরিমাণ ই-বর্জ্যের সৃষ্টি হচ্ছে। অবৈধভাবে বেচা-বিক্রির কারণে একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সূত্র জানিয়েছে, বিদেশ থেকে মোবাইল ফোন আমদানি করতে হলে সংশ্লিষ্ট সেটগুলোর আইএমইআই নম্বর বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে জমা দিতে হয়। এর পর বিটিআরসি অনাপত্তি ছাড়পত্র দেয়। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সেট আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এ কাজ বিটিআরসির স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট শাখা করে থাকে। কিন্তু এই শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, একটি আইএমইআই নম্বর দিয়ে হাজার হাজার মোবাইল সেট তৈরি করা হচ্ছে। অবৈধ এসব মোবাইল সেট বিভিন্ন রুট দিয়ে বিপুল পরিমাণ ঢুকছে দেশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নকল মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনের পরিমাণ অনেক বেশি। এ কারণে সৃষ্টি হচ্ছে এক ধরনের বিপর্যয়।

সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৪ হাজার ৯০০ পিস জি ফোন ব্র্যান্ডের নকল মোবাইল সেট জব্দ করে। অবৈধ আইএমইআই নম্বর দিয়ে খালাসের সময় প্রায় ১৫ হাজার মোবাইল আটক করা হয়। প্রায় প্রতি মাসেই এমন মোবাইল ফোনের চালান আটক হচ্ছে। গত ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটে অভিযান চালায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও র‌্যাব। এ সময় ছয় লাখ টাকার অবৈধ হ্যান্ডসেট ও জ্যামার জব্দ করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ১১ জনকে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার উল আলম। তিনি বলেন, আইএমইআই নম্বরের মাধ্যমে প্রস্তুত নকল হ্যান্ডসেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী জ্যামারের বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে আটক ১১ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিকভাবে ১০ দিন থেকে এক বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন মামলার তদন্তকাজে নিয়োজিত থাকেন এমন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, নকল আইএমইআই নিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন তারা। এই কর্মকর্তা বলেন, একজন অপরাধীকে খুঁজে পেতে সাধারণত তার সিমকার্ড রেকর্ড বের করা হয়। কিন্তু অপরাধ সংঘটনের পর সিমকার্ড খুলে ফেললে আইএমইআই নম্বরই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে অপরাধী শনাক্তে। ওই আইএমইআই নম্বরে যে কোনো সিমকার্ড চালু করলে তার রেকর্ড পেয়ে যান তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিপত্তি বাধছে আইএমইআই নম্বর নকল হলে। আইএমইআই নকল হওয়ায় বিকল্প নানা কষ্টসাধ্য পথ খুঁজতে হয় সংশ্লিষ্টদের।

মোবাইল ফোনের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেট, মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটিসহ অনেক অভিজাত মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে নকল মোবাইল ফোনসেট। এমনকি চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেটেও এখন মিলছে নকল সেট। মোবাইল ফোনসেট ব্যবসায় জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীন ও হংকং থেকে আলাদা মোবাইল ফোনসেটের সব নকল পার্টস আমদানি করা হয়। পরে ঢাকার মার্কেটে সেগুলো সংযোজন করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর