শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ধনাঢ্য ভিক্ষুক

মির্জা মেহেদী তমাল

ধনাঢ্য ভিক্ষুক

নাম হাজী কামাল শেখ। হাতে ব্যান্ডেজ। রক্ত মাখানো। রাজধানীর রমনা পার্কের সামনে বসে ভিক্ষা করছিলেন। অনেকেই তাকে ভিক্ষা দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল তার হাতে আসলে কিছুই হয়নি। পেটের দায়ে হাতে ব্যান্ডেজ করে লাল আলতা রং মেখে ভিক্ষা করছেন। আগে হাত পেতে ভিক্ষা করতেন। আয় ভালো হতো না। তখন তার দৈনিক আয় ছিল ২০০-৩০০ টাকা। ব্যান্ডেজ লাগানোর পরই ভাগ্য ফিরল। প্রতিদিন অনায়াসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়। নতুন নতুন এলাকায় গেলে আয় বেড়ে যায়। এক এলাকায় এক মাসের বেশি থাকেন না। তার বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে। বউ-ছেলেমেয়ে সব গ্রামেই থাকেন। তার চার স্ত্রী। গ্রামের এক বাড়িতেই থাকেন চারজন। ভিক্ষা করে প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা পাঠান। আর বাকি টাকা তিনি নিজের কাছেই রাখেন। চার ঘরে ১০ সন্তান। ছয় ছেলে, চার মেয়ে। এর মধ্যে চার ছেলে বিদেশে। দুই ছেলে গ্রামেই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। চার মেয়েরই বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ভিক্ষা করায় এ পেশা ছাড়তে পারছেন না তিনি। তার স্বপ্ন ভিক্ষা করেই ঢাকা শহরে বাড়ি করবেন। কারণ, তাকে যিনি ভিক্ষা করে অধিক উপার্জনের পথ দেখিয়েছেন, তার এখন ঢাকা শহরে একাধিক বাড়ি। তাই হাজী কামাল শেখ চান তার ঢাকা শহরে প্রতিটি ছেলের নামে একটি করে ফ্ল্যাট থাকবে। কারণ, সোনাইমুড়ীর এক ভিখারি ভিক্ষা করে ধনী হয়ে ইউপি মেম্বার পদে নির্বাচন করেছেন। তিনি দুবার হজ করেছেন। তাই নামের আগে হাজী। দুবারই ভিক্ষার টাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাংলাদেশে ভিক্ষুকের আয় নির্ভর করে তাদের শারীরিক আবেদন ও অভিনয়ের দক্ষতার ওপর। আপনি কোনো ভিক্ষুককে দেখবেন না রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডাল-ভাত খাচ্ছে। তারা মুরগি বা গরু ছাড়া ভাত খায় না। আর আপনার-আমার মতো সাধারণ মানুষ টাকা বাঁচানোর জন্য কখনো কখনো ভাত না খেয়ে রুটি-সবজি খাই। আর যারা রিকশাচালক বা দিনমজুর তারা ৫ টাকার রুটি আর ৫টার এক কাপ চা খেয়ে সারা দিন রিকশা চালান।ভিক্ষাবৃত্তি হলো বিনা পুঁজিতে ব্যবসা, আর কেউ যদি হাজী কামালের মতো ব্যান্ডেজ আর লাল আলতায় পুঁজি বিনিয়োগ করেন, তাহলে তো কোনো কথাই নেই।

বাংলাদেশের তথ্যমতে শতকরা আটানব্বই ভাগ ভিক্ষুক প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভিক্ষা করেন। সর্বনিম্ন দুই মাস থেকে দুই বছর পর নির্দিষ্ট এলাকা পরিবর্তন করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর