শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সৌর পাতকুয়া হাসি ফোটাল কৃষকের মুখে

সাইফুল ইসলাম, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)

সৌর পাতকুয়া হাসি ফোটাল কৃষকের মুখে

সৌর পাতকুয়া দারুণ প্রভাব ফেলেছে কৃষি কাজে। এই কুয়া নালিতাবাড়ীর কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কৃষকরা ২৫০ একর জমিতে সৌর পাতকুয়া ব্যবহার করছেন। তারা এ কুয়া থেকে জমির জন্য যাবতীয় সেচের কাজ করতে পারছেন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে,  প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে কৃষকরা তাদের অনাবাদি জমি সেচের আওতায় এবং আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার লক্ষে এলাকার সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় এবং তার পরিকল্পনা ও বরাদ্দে বিএডিসির সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে দশটি এবং নকলায় দুটি সৌর প্যানেলযুক্ত পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি পাতকুয়ার জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। পানির অপচয় রোধ করা এবং যেসব এলাকায় পানির সংকট রয়েছে, বিশেষ করে সবজি, রবিশস্য আবাদ করা যায় না— সেসব অঞ্চলে সহজেই সেচ সুবিধার জন্য এই পাতকুয়া বা ডাগওয়েল নির্মিত হয়েছে। পাতকুয়ার মাধ্যমে সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন বাড়ছে এবং কৃষিতে আরও সমৃদ্ধি আসছে। পাতকুয়াগুলো থেকে কৃষকরা দিনের বেলা শুষ্ক মৌসুমে পানি নিতে পারছেন। পাতকুয়াগুলো চালানো হচ্ছে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে। ফলে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ নিতে হচ্ছে না। একটি পাতকুয়ার ব্যাস ৫৬ ইঞ্চি ও গভীর ১২০ ফুট। পাতকুয়ার ওপরে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের ছাতা নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ৩ হাজার ৬০০ ওয়াট সম্পন্ন সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। সূর্যের আলোয় সৌর প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দিয়ে ৩ হাজার ৫০০ ওয়ার্ড ক্ষমতা সম্পন্ন সাবমারসিবল মোটর পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার লিটার পানি পাতকুয়া থেকে  উত্তোলন করা যাচ্ছে। এই পানি পাশের ১৮ ফুট উপরে স্থাপিত ৩ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাঙ্কিতে তোলা হচ্ছে। উত্তোলিত পানি পাইপের মাধ্যমে মাটির নিচ দিয়ে ৫০০ মিটার দূরত্বে সরবরাহ করা হচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন স্থানে সাত পয়েন্টে নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার কৃষকরা পাতকুয়ার পানিতে গম, ভুট্টা, লাউ, শিম, পিয়াজ, রসুনসহ বোরো আবাদের জন্য সেচ দিয়ে জমি তৈরি করছেন। কয়েকজন কৃষক পাইপের মাধ্যমে তাদের জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এ ছাড়া পাশে গৃহস্থালি কাজের জন্য কয়েকজন গৃহিণী পানি সংগ্রহ করছেন। উপজেলা কৃষক কমিটির সদস্য ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক মো. রেজাউল করিম বলেন, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর কাবিটার টাকায় সব পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়েছে। কৃষকরা মাত্র ১০ টাকায় তাদের জমিতে সেচের সুবিধা পাচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফ ইকবাল বলেন, সেচের অভাবে অধিকাংশ জমি অনাবাদি থাকত। কিন্তু কৃষিমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী অত্যাধুনিক পাতকুয়া নির্মাণের ফলে এখন তিন হাজার কৃষক ২৫০ একর জমিতে শীতকালীন সবজিসহ বোরো আবাদ করতে পারছেন।

সর্বশেষ খবর