শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পুলিশ নয় দুর্ধর্ষ প্রতারক

মির্জা মেহেদী তমাল

পুলিশ নয় দুর্ধর্ষ প্রতারক

সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল ধনকু া গ্রাম। সেখানকার একজন পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই সাইদুর রহমান কিছু কাগজ হাতে নিয়ে স্থানীয় প্রবাসীর বাসায় যান। প্রবাসীর স্ত্রী সাহারার সঙ্গে দেখা করেন। বলেন, ‘আমি এসপি অফিস থেকে এসেছি। আপনাদের জমির কোনো কাগজপত্র নেই।’ এ বিষয়টি নোটিস করতে তাকে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এএসআই সাইদুর। এমন কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়েন সাহারা। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা এক পর্যায়ে তাকে বোঝাতে সমর্থ হন। সাহারা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন সমস্যা সমাধান করে দিতে। কিন্তু এ জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করে এএসআই সাইদুর। সাহারার বাড়িতে সাইদুরের আসা যাওয়া শুরু হয়। একসময় সাইদুর সাহারার জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নগদ ৩ লাখ টাকা সাইদুরকে দেয় সাহারা। এর কয়েকদিন পর আরও ২ লাখ টাকা দেওয়া হয় সাইদুরকে। এরপর আরও কয়েকবার সাহারার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা আদায় করে সাইদুর। এমনি করে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার পরেও প্রতারক সাইদুর সাহারার কাছে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করে। ১০ লাখ টাকা দেওয়ার পর আবার অতিরিক্ত টাকা চাওয়ায় তা দিতে অস্বীকৃতি জানায় সাহারা। এতে করে সাইদুর তাকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। পরে বিষয়টি সাহারা নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে জানান। পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সাইদুরের বিপি নম্বর যাচাই করে জানতে পারে এ নম্বরে কোনো পুলিশ নেই। নাম এবং বিপি নম্বর দুটোই ভুয়া। বিষয়টি সাইদুরকে বুঝতে না দিয়ে টাকা দেওয়ার কথা বলে তাকে আসতে বলে সাহারার বাসায়। টাকা নেওয়ার জন্য সাইদুর সাহারার বাসায় আসে। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশ তাকে হাতেনাতে আটক করে। পরে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে। পুলিশ জানায়, সাইদুর রহমান নিজেকে কখনো রফিকুল নামে পরিচয় দিত। সেই পরিচয়ে তিনি প্রতারণা করে আসছেন। তিনি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে অপকর্ম করে বেড়াত। এর আগে তার নামে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছিল। পুলিশ জানতে পারে, পটুয়াখালী জেলার সন্দুখালী থানার হাবিবুর রহমানের ছেলে এই সাইদুর রহমান। বয়স ৩৫। দশ বছর আগে পটুয়াখালী থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে ভ্যানগাড়িতে করে বিভিন্ন পণ্য ফেরি করে বিক্রি করত। পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির কাজও করত সে। কিন্তু এসব কিছুর আড়ালে সাইদুর আরও একটি কাজে জড়িত ছিল। তার সেই কাজ করার জন্য সে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিত। নিজেকে পুলিশের এএসআই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইলিং করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তার আসল পেশা। এ ধরনের প্রতারণার জন্য সাইদুর নিজের আসল নাম গোপন রেখে রফিকুল ইসলাম নামে (বিপি ৯১২১৬০৫৬৮০) পুলিশের ভিজিটিং কার্ডও বানিয়েছিল।

সর্বশেষ খবর