শিরোনাম
শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি

পত্নিতলায় সমন্বিত কৃষিখামার

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

পত্নিতলায় সমন্বিত কৃষিখামার

নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই ফলের বাগান করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। নানা জাতের গাছ থাকবে সেই বাগানে আর বিচিত্র সব ফলে ভরে উঠবে বাগানটি। সেই স্বপ্নকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের রূপগ্রাম গ্রামের সোহেল রানা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে গড়ে তোলেন সমন্বিত কৃষি খামার ‘রূপগ্রাম অ্যাগ্রোফার্ম’। পড়াশোনা শেষে চাকরি করা ছাড়া অন্য কিছু ভাবার অবকাশ ছিল না। কিন্তু ফলের বাগান গড়ে তোলার স্বপ্নটি তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। পত্র-পত্রিকায় দেশের বিভিন্ন স্থানের সফল খামারিদের গল্প আগ্রহ নিয়ে পড়তেন এবং সুযোগ পেলেই সেসব খামার পরিদর্শনে যেতেন। শুরুতে বেশির ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী নিরুৎসাহিত করলেও এক প্রকার স্রোতের বিপরীতে সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তোলার কাজে হাত দেন সোহেল। তার বাগান দেখে এখন অনেকেই ফলের বাগান করছেন। রূপগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক ফলের বাগান। এসব বাগানে আম, পেয়ারা, লেবু, স্ট্রবেরি ও কুল গাছই বেশি। ছাত্র অবস্থাতেই বাড়ির পাশে ৬ বিঘা জমিতে আমের বাগান গড়ে তোলেন তিনি। এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেন। ২০১৫ সালে চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসে ছোট ভাই আবদুল বারীকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন সমন্বিত কৃষি খামার। সমন্বিত খামারে রয়েছে আম, লিচু, ড্রাগন ফল, মাল্টা, খাটো জাতের নারিকেল, লেবুসহ ৫০ প্রজাতির ফলের গাছ। আরও আছে বাসক, তুলসী, নিম, নীল অপরাজিতা, সাদা লজ্জাবতীসহ নানা প্রজাতির ঔষুধি গাছ। আছে বিভিন্ন জাতের ফুল গাছ। এছাড়া তিনটি পুকুরে মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। সফল খামারি হওয়ার জন্য সোহেল যুব উন্নয়ন অধিদফতর, আরডিএ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএমডিএ থেকে কৃষির ওপর বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নিশ্চিন্তপুরের শহিদুল ইসলাম বলেন, সোহেলের খামার দেখে উৎসাহিত হয়ে ১০ বিঘা জমিতে আম ও থাই পেয়ারার বাগান করেছি।

এছাড়া দুটি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেছি। বাগান ও মাছ চাষ করার ব্যাপারে সোহেল রানা বিভিন্ন সময় চারা ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। করমজাই গ্রামের আবদুল জব্বার বলেন, সোহেলের সাফল্য দেখে উৎসাহিত হয়ে ৪ একর জমিতে গত বছর আম ও পেয়ারার বাগান গড়ে তুলেছেন। আশা করছেন, সফল হবেন। নিজের স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে সোহেল রানা বলেন, এই এলাকায় অ্যাগ্রো ট্যুরিজম গড়ে তোলার স্বপ্ন রয়েছে তার। যেখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফল থাকবে। এছাড়া বিলীন হতে বসা বিভিন্ন দেশি গাছের (জার্ম প্লাজম) সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার স্বপ্ন রয়েছে। এ লক্ষ্যে সাপাহারে আরও ১৫ একর জমিতে মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলছেন। পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, উচ্চশিক্ষিত হয়ে শুধু চাকরি করতে হবে এ কথা ঠিক নয় বরং লেখাপড়া জানা মানুষদেরই কৃষি পেশায় আশা উচিত। চাকরি করে শুধু নিজের পরিবার চালানো সম্ভব। কিন্তু একজন ভালো উদ্যোক্তা কিংবা সফল খামারি নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন। সোহেল সেটিরই উজ্জ্বল উদাহরণ। কৃষিবিভাগ তার খামারকে সফল করার জন্য চারা দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে।

সর্বশেষ খবর