সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
সরেজমিন গাজীপুর

শান্তিপূর্ণ ভোট বিচ্ছিন্ন ঘটনা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন ও আফজাল খান

টঙ্গী থেকে কালীগঞ্জের দিকে যেতে যেতে গাজীপুর-২ ও গাজীপুর-৫ আসনের যে কেন্দ্রগুলো চোখে পড়েছে সেসব কেন্দ্র পরিদর্শন করে এ কথা বলা যায়, রাজধানী ঢাকার পাশের এ জেলাটিতে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সহিংসতায় আওয়ামী লীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। বাকি কেন্দ্রগুলোয় সকালের দিকে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ সময় কোনো কেন্দ্রে ধানের শীষ আবার কোনো কেন্দ্রে হাতপাখার প্রার্থীর এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সব কেন্দ্রেই ছিল নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সরব উপস্থিতি। সকাল ৯টার দিকে টঙ্গীর নোয়াগাঁও এলাকার এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারের লম্বা লাইন চোখে পড়ে। বিশেষ করে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো। পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আনন্দ দেখা গেছে তাদের চোখেমুখে। জিজ্ঞাসা করলে কয়েকজন নারী ভোটার একসঙ্গে জানান, তারা কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই ভোট দিতে পারছেন। সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরুর পর এক ঘণ্টায় এ কেন্দ্রের দুটি বুথের একটিতে ২১ ও আরেকটিতে ৩৪টি ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দুই বুথের দুটিতেই নৌকার এজেন্ট ছিল, ধানের শীষ বা অন্য প্রার্থীর এজেন্ট দেখা যায়নি। বাইরে লাইন থাকার পরও ভোট গ্রহণের পরিমাণ কম হওয়া প্রসঙ্গে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ৮টা থেকে শুরু হলেও ভোটাররা নাশতা সেরে এখন আসতে শুরু করেছেন।

এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় গাজীপুর-২ আসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী সাবেক এমপি শ্রমিকনেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেলের নিজস্ব কেন্দ্র এটি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন। এ সময় প্রতিপক্ষের এজেন্টদের অনুপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নৌকার এই প্রার্থী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির এজেন্টরা সারা রাত নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করেছেন। সে কারণে তারা হয়তো এখনো ঘুমাচ্ছেন। তবে এজেন্ট দেওয়া প্রার্থীর কাজ। তারা না দিলে আমাদের কী করার আছে বলে উল্টো প্রশ্ন রাখেন তরুণ এই এমপি।

সকাল ১০টার দিকে গাজীপুর-৫ আসনের পুবাইল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রেও ভোটারদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। এ কেন্দ্রে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ভোটার ২ হাজার ৯৪৩ জন। এর মধ্যে দুই ঘণ্টায় প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান প্রিসাইডিং অফিসার বদিউল আলম। এ কেন্দ্রটিতে গিয়ে অবশ্য নৌকা ও ধানের শীষ দুই প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া গেছে। ধানের শীষের প্রার্থী ফজলুল হক মিলনের এজেন্ট রুবি আক্তার বলেন, ‘পরিবেশ ভালো। সমস্যা নেই।’ ভোটের লাইনে দাঁড়ানো অনিতা বলেন, ‘আমাদের কেউ বাধা দেয়নি। ঠিকভাবেই ভোট দিতে আসছি।’ এ কেন্দ্রের ১ নম্বর বুথে সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়েছে ১০২টি।

কয়ের উচ্চবিদ্যালয়ে (বড় কয়ের) গিয়েও ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্ট দেখা গেছে। সেখানে এই দায়িত্বে রয়েছেন আবদুল বাতেন ভুইয়া ও নাদিয়া ইয়াসমীন। তারাও স্বীকার করেন ‘সমস্যা নেই, পরিবেশ শান্ত।’ বেলা ১১টার দিকে বড় কয়ের থেকে ছোট কয়েরের দিকে আসার সময় জানা গেল গ গোল হচ্ছে। ভোট গ্রহণ স্থগিত। বাড়িয়া ইউনিয়নের ছোট কয়ের কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল মাঠ ফাঁকা। গ গোলের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ভোটারদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। কেন্দ্রের এক পাশে একটি পুকুরের ধারে উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকের জটলা। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা নিজেদের বিএনপি সমর্থক পরিচয় দিয়ে জানান, ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না। লাইন থেকে বের করে দিয়েছে পুলিশ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল অবশ্য এ ঘটনার জন্য বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের দায়ী করে বলেন, ‘এটা বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। তারা জোর করে কেন্দ্র দখল করতে চায়।’ কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা ফরমান জানান, আকস্মিকভাবে কয়েকজন লোক কেন্দ্রে হামলা চালায়। তারা কোন দলের সমর্থক বোঝা যায়নি।

মাঝে মাঝু খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলদি জনতা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে যথারীতি ভোটারদের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে দেখা যায়। গাজীপুর-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকির নিজস্ব কেন্দ্র নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুপুর ১টার দিকেও এ কেন্দ্রে নারী ভোটারদের ছিল সরব উপস্থিতি। জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর উচ্চবিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দেখা হয় হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমানের সঙ্গে। তিনি অবশ্য অভিযোগ করেন, পরিবেশ শান্তিপূর্ণ দেখা গেলেও নির্বাচন হচ্ছে একতরফা।

সর্বশেষ খবর