সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সকালেই লম্বা লাইন

নিজামুল হক বিপুল

ঘড়ির কাঁটায় সকাল পৌনে ৯টা। রাজধানীর মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকা। এক পাশে মহাখালী আ. হামিদ দর্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যপাশে টিএন্ডটি বালক উচ্চ বিদ্যালয়। এ দুটি কেন্দ্রই পড়েছে ঢাকা-১৭ আসনে। আ. হামিদ দর্জি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেল শত শত মানুষ ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। দীর্ঘ লাইন। স্কুলের ভিতর থেকে ভোটারদের লাইন চলে গেছে রাস্তা পর্যন্ত। এটি পুরুষ কেন্দ্র। কিন্তু লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই ভোটার নম্বার না পাওয়ায় ভোট দিতে ভিতরে ঢুকতে পারছেন না। এদেরই একজন মহাখালী এলাকার মো. হারুন শেখ। হাতে স্মার্টকার্ড নিয়ে ঘুরছেন আর বলছেন এখন পর্যন্ত নিজের ভোটার নম্বরটা জানতে পারলাম না। একই অবস্থা এই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা নজরুল ইসলামের।  তিনিও বিভিন্ন জনের সহযোগিতা চাচ্ছেন নিজের ভোটার নাম্বারের জন্য। নির্বাচন কমিশনের ১০৫ নম্বরে কয়েক দফা এসএমএস পাঠিয়েও তিনি নিজের ভোটার নম্বর উদ্ধার করতে পারেননি।

টিএন্ডটি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল মহিলা ও পুরুষ ভোটারদের লম্বা দুটি লাইন। লাইন ধরেই তারা কেন্দ্রে যাচ্ছেন ভোট দিতে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ফিরে আসছিলেন নিজের ভোটার নাম্বার মিলাতে না পারায়। তবে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এম ডি ইউনুস মিয়া মাসুদ সকাল সাড়ে ৯টায় বলেন, দেখতেই পাচ্ছেন ভোটারদের লাইন। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন। তিনি বলেন, তবে কারও কারও ভোটার নাম্বারের মিল না পাওয়া ভোট দিতে পারেননি। এছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই। ঠিক উল্টো চিত্র ছিল একই আসনের বনানী বালক বিদ্যালয় কেন্দ্রের। বালক কেন্দ্র হলেও এই কেন্দ্রটি শুধুমাত্র মহিলা ভোটারদের জন্য। কেন্দ্রে ঢুকে দেখা গেল, খুব একটা ভিড় নেই। ভোটের জন্য তিন-চারটা লাইনে দাঁড়িয়েছেন মহিলারা। কড়াইল বস্তির হালিমা খাতুন বললেন, ভোট দিলাম। কোনো সমস্যা হয়নি।

সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকা-১৮ আসনে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের আই ই এস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেন্দ্রের বাইরে বহু লোকের জটলা। এরা সবাই নৌকা মার্কার সমর্থক। রাস্তার ওপর নৌকা মার্কার বুথ রয়েছে। যেখান থেকে ভোটারদেরকে তাদের ভোটার নম্বর দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে দেখা গেছে, উপস্থিতি স্বাভাবিক। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সহধর্মিণী হুসনে আরা হুদা। এর মিনিট দশেক পড়েই নিজের ভোট দিতে এই কেন্দ্রে প্রবেশ করেন সিইসি নূরুল হুদা। আই ই এস স্কুলে মোট পাঁচটি কেন্দ্র। কিন্তু এই কেন্দ্রগুলোর একটি বুথেও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর কোনো পোলিং এজেন্ট ছিলেন না। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা সিইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এজেন্টরা না আসলে তো এজেন্ট থাকবে না। উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে মোট কেন্দ্র রয়েছে আটটি। দুপুর সাড়ে ১২টায় ৬ নম্বর কেন্দ্রে ঢুকে দেখা গেছে, কেন্দ্রের চারটি বুথে মহিলা ভোট দিচ্ছেন। ওই সময় পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয় ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ ওই কেন্দ্রে মোট ১৮৭৫ জন ভোটারের মধ্যে তখন পর্যন্ত ভোট দেন প্রায় ৬০০ জন। এই কেন্দ্রের কোনো বুথেই বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, এখানে নৌকা, হাতপাখা, বাঘ মার্কা ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর পক্ষে এজেন্ট নেই। বিএনপি বা ধানের শীষের পক্ষে কেউ আবেদনও করেনি। শুধু এই কেন্দ্রেই নয়, উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অপর কেন্দ্রগুলোতেও একই অবস্থা। কোথাও ধানের শীষের পোলিং এজেন্টকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর প্রিসাইডিং অফিসাররাও বলেছেন একই কথা। ধানের শীষের পক্ষে কেউ এজেন্ট হতে কেন্দ্রে আসেনি। দুপুর একটার দিকে উত্তরার মালেকাবানু আদর্শ বিদ্যানিকেতন, নওয়াব হাবিবুল্লা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোটারের উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত কম। তবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং এজেন্টরা জানিয়েছেন, সকালের দিকে এই কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল এবং লাইনও পড়েছিল। এখন মধ্যাহ্ন ভোজের কারণে উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। ঢাকা-১১ আসনের জামিয়া মাদানীয়া মাদরাসার তিনটি কেন্দ্রে দুপুরের আগেই গড়ে ৫০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। এই কেন্দ্রে গিয়েও পাওয়া গেছে একই চিত্র। কোনো বুথেই  পোলিং এজেন্ট নেই ধানের শীষের। দুপুর পৌনে দুটায় আবার ঢাকা-১৭ আসনের ৪৭ নম্বর কেন্দ্রে গিয়ে পাওয়া গেল ভিন্ন তথ্য। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদ জানালেন, তার কেন্দ্রে চারটি বুথে ধানের শীষের এজেন্ট সকাল থেকেই ছিলেন। তবে দুপুরে খেতে  গেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর