সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন আর নেই

প্রতিদিন ডেস্ক

চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন আর নেই

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন গতকাল মারা গেছেন। কলকাতার ভবানীপুরে নিজের বাড়িতে সকাল সাড়ে ১০টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তিনি কিছু দিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তার মরদেহ আপাতত পিস হেভেনে (তাপানুকুল শব সংরক্ষণাগার) রাখা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো থেকে ছেলে কুনাল সেন বাড়িতে ফিরলেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। স্বনামখ্যাত এই বাঙালি পরিচালকের জন্ম ১৯২৩ সালের ১৪ মে, বাংলাদেশের ফরিদপুরে। সেখানেই স্কুলের গন্ডি পেরোনোর পর উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় আসেন। প্রথমে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

১৯৫৫ সালে ‘রাতভোর’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে যাত্রা শুরু হয় মৃণাল সেনের। সেই ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। প্রথম ছবিতে তেমন সাফল্য না পেলেও পরের ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’ ছবিতে নিজের দক্ষতার পরিচয় দেন। ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবি বানিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন মৃণাল সেন। তার পরিচালিত বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে : ‘ভুবনসোম’, ‘অকালের সন্ধানে’, ‘কোরাস’, ‘মৃগয়া’, ‘পুনশ্চ’, ‘খারিজ’, ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘পরশুরাম’, ‘ক্যালকাটা ৭১’,। ২০০২ সালে তার শেষ ছবি ‘আমার ভুবন’। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করে। ২০০৫ সালে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি ১২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। ১৯৮৫ সালে তাকে ফ্রান্স সরকারের তরফে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটারস’ সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রবাদপ্রতিম এই চিত্র পরিচালক বামপন্থায় বিশ্বাসী থাকলেও কখনো সক্রিয় রাজনীতি করেননি। তবে একবার রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য হয়েছিলেন। মৃণাল সেনের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনীতি ও চলচ্চিত্র জগতে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, সিপিআইএম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সবাই। এক শোকবার্তায় মমতা ব্যানার্জি জানান, ‘মৃণাল সেনের মৃত্যুতে আমি গভীর শোকাহত। চলচ্চিত্র জগতের কাছে এটা একটা অপূরণীয় ক্ষতি। তার পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা।’ অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় টুইট বার্তায় জানান, ‘আমাদের সবার জন্য বড় ক্ষতি’। অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মৃণাল সেনের চলে যাওয়াকে ‘বাংলা সিনেমার মহীরুহের পতন’ বলে মন্তব্য করেন।

সর্বশেষ খবর