বুধবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সারা দেশে বই উৎসব

আকতারুজ্জামান

সারা দেশে বই উৎসব

নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়েছে শিক্ষার্থীরা। বই পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে তাদের মন। নতুন বই যেন শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল নববর্ষেরই এক উপহার। নতুন বই হাতে পেয়ে আত্মহারা হয়েছিল কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা। সারা দেশের স্কুলে-স্কুলে, মাদ্রাসায় গতকাল বিতরণ করা হয়েছে নতুন বই। শীতের সকালে শীত মাড়িয়েই ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নিয়েছিল বই উৎসবে। শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে ছিল নতুন বই পাওয়ার আনন্দ।

২০১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল, মাদ্রাসা ও ভোকেশনালে ৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে মোট ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২টি নতুন বই বিতরণ শুরু করেছে সরকার। ২০১০ সাল থেকে এ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই বিতরণ করা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রীয়ভাবে মাধ্যমিকের বই উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে কথা হয় কুড়িল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মানিক হাসানের সঙ্গে। মানিক জানায়, বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পেয়ে খুব ভালো লাগছে। স্কুলের শিক্ষিকা হাবিবা সুলতানা জানান, এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সাত শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন বই পাওয়ায় শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে বেশি মনোনিবেশ করবে বলে জানান তিনি।

গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি ভাষায় বই বিতরণ করা হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে ব্রেইল বই। মান্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া সাগর হোসেন জানায়, বছরের প্রথম দিনে নতুন রঙিন বই পেয়েছি। নতুন বই পড়তেও ভালো লাগবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে ২ কোটি ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৫১ শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন বইয়ের পাশাপাশি অনুশীলন খাতাও বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বেলুন উড়িয়ে বই বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে বই উঁচু করে ফটোসেশনে অংশ নেন তিনি। মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আপ্লুত হয় শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বিভিন্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা বই উৎসব অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিনে বই বিতরণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ দুনিয়ার একমাত্র দেশ, যেখানে সব বই বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। জগতে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের এমন উদাহরণ আর নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফল হয়েছে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা এবং আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাছিবুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে বই বিতরণ উৎসবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ফোনে আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বই বিতরণের উদ্বোধন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জাফর ইকবাল, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বক্তব্যে বলেন, ৩৫ কোটির বেশি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এত বই বিশ্বের কোনো দেশ ছাপায় না। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের জন্যই এত কষ্ট করে বই ছাপানো হয়। পছন্দের বইটি রাতেই পড়ে ফেলার আহ্বান জানান তিনি। কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক নতুন বই পাওয়া খুদে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে তোমরা নতুন বই পাও। আমরা কোনো দিন নতুন বই পাই নাই, সবসময় পুরনো বই নিতাম। কিন্তু খুবই ভালো লাগছে যে বাংলাদেশ এতদূর এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ছেলেরা জেগে উঠেছে, মেয়েরাও জেগে উঠেছে। মেয়েরা বরং ছেলেদের চেয়ে বেশি স্কুলে যায়। এই জন্য আজ থেকে দশ-পনেরো বছর পরে বাংলাদেশ হবে একটা সোনার দেশ।

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান বলেন, তোমরা দেশের ভবিষ্যৎ, তাই তোমাদের হাতে বই তুলে দেওয়াটা সব থেকে বড় কাজ। আশা করি, তোমরা সবাই পড়াশোনায় মনোনিবেশ করবে। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলার পরামর্শও দেন সাকিব আল হাসান। শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। অতিথিরা পরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বই বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন। বছরের প্রথম দিনে নতুন বই উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান রাজধানীর লালবাগে হাজী ইব্রাহিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর