বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারের অংশীদারিত্ব চায় জাতীয় পার্টি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় সিংহভাগ নেতাই সরকারে থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা গতবারের ফর্মুলা অনুযায়ী বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারের অংশীদারিত্বেও থাকতে চান বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নবনির্বাচিত ১৪ জন এমপিসহ ৩৬ জন উপস্থিত থাকলেও উপস্থিত ছিলেন না পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, সাবেক দুই মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্য। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য সালমা ইসলাম বলেন, ‘গত ১০ বছরে এই পার্টির জন্য অনেক শ্রম দিয়েছি। কিন্তু দল আমার পক্ষে অবস্থান নিলে আমি এমপি হতাম। আমি অন্য দলের প্রতীক থেকে যেন নির্বাচন করি সে অফার ছিল, আমি যাইনি। আমি মনে করি, আমাদের সত্যিকারের বিরোধী দল হওয়া উচিত।’ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘শেখ হাসিনা আর পল্লীবন্ধু এরশাদের নেতৃত্বে মহাজোট হয়েছে। মহাজোটের কারণেই আমরা এমপি। শেখ হাসিনা এখন রাজনীতি করেন ট্রাম্প ও মোদির সঙ্গে। ড. কামাল, ফখরুল, রব, মান্নাদের নিয়ে রাজনীতি করার সময় তার নেই। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আমরা সরকারে না থাকলে এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। বিষয়টি উপলদ্ধি করতে হবে। আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না।’ আজম খান বলেন, ‘মহাজোট যেহেতু সরকারই সৃষ্টি করেছে তাই মহাজোটের মাধ্যমে সরকারে থাকাই বাঞ্ছনীয়।’ শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পার্টির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেছি। কিন্তু মহাজোটের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ পার্টি করব কি না তা এরশাদ সাহেবের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আমি মনে করি, আমাদের গতবারের মতো সরকারের সঙ্গে থাকা উচিত। তা না হলে আমরা টিকে থাকতে পারব না।’ এ ছাড়া মুজিবুল হক চুন্নু, হাজী সাইফুদ্দিন মিলন, আদেলুর রহমান, পনিরউদ্দিন আহমেদসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্য গতবারের মতো বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারে থাকার পক্ষে বক্তব্য দেন। এ টি ইউ তাজ রহমান বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক হতে হবে। হয় সরাসরি সরকারে থাকব, অথবা বিরোধী দলে থাকব। বিরোধী দলে থেকে মন্ত্রিত্ব নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ বিরোধী দলে থেকে মন্ত্রিত্ব নিলে জনগণ আমাদের ভিন্নভাবে নেবে।’ তার এ বক্তব্য সমর্থন করেন অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, হাফিজউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। গোলাম কিবরিয়া টিপু নির্বাচনের আগে মনোনয়ন-বাণিজ্যের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করার দাবি জানান। যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, আবুল কাশেম, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, শেখ মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সৈয়দ আবদুল মান্নান, ফখরুল ইমাম এমপি, সালমা ইসলাম, প্রফেসর মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, নূর-ই হাসনা লিলি চৌধূরী, হাবিবুর রহমান, এস এম ফয়সল চিশতী, আজম খান, এ টি ইউ তাজ রহমান, আতিকুর রহমান আতিক, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, কেন্দ্রীয় নেতা পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি, পনির উদ্দিন আহমেদ এমপি, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি প্রমুখ।

জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা মহাজোটে ছিলাম। মহাজোটের শরিকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্বাচন করেছি। আমাদের লক্ষ্য এবং কথা ছিল অভিন্ন। তাই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

মসিউর রহমান রাঙ্গা বৈঠক শেষে বলেন, আজ জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়ে সংসদীয় দলের সভায় অংশ নেবেন। দেশ ও মহাজোটের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে পার্টির সংসদীয় দলের সভায় সিদ্ধান্ত হবে সংসদে জাতীয় পার্টির ভূমিকা সম্পর্কে। এরপর আলাপ-আলোচনা হবে মহাজোটের সঙ্গে।

সর্বশেষ খবর