বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
একান্ত সাক্ষাৎকারে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ চাই

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ চাই

প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। একাদশ জাতীয় সংসদে সরকারি, না বিরোধী দলে- কোন ভূমিকায় থাকছে জাতীয় পার্টি সে সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। একান্ত এ সাক্ষাৎকারে তিনি মহাজোটের নিরঙ্কুশ জয়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। একাদশ জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি সরকারি, নাকি বিরোধী দলে থাকবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংসদে জাতীয় পার্টি কোন ভূমিকায় থাকবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের দলীয় প্রধান সিদ্ধান্ত নেবেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগামী সংসদে থাকার বিষয়ে আমাদের দুটি পছন্দ আছে, যার একটি হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদের মতো সরকার ও বিরোধী দলের দুটো ভূমিকায় থাকা। অন্যটি হচ্ছে সরাসরি বিরোধী দল হিসেবে সংসদে থাকা। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় প্রধান।’

ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী প্রার্থীদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ার গুঞ্জন বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তবে আন্দোলনের নামে নাশকতা কিংবা সহিংসতায় জড়ালে ঐক্যফ্রন্ট কিংবা ২০-দলীয় জোট মানুষের কাছ থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বলে মনে তিনি মনে করেন। বিগত নির্বাচনগুলোতে তাদের (বিএনপি-জামায়াত) জনগণ যেভাবে বয়কট করেছে, ফের যদি আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে তাহলে তারা আরও জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদে মহাজোটের প্রত্যাশা নিয়ে মহাজোটের এ প্রভাবশালী নেতা বলেন, ‘মহাজোটের প্রত্যাশা সব দলের প্রতিনিধিত্বশীল একটি সংসদ হবে, যাতে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সমাধান বের করা হবে। সংসদে সরকারের ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা না হলে তা সরকারের জন্য শুভকর হবে না। আমরা চাই তারা (২০-দলীয় জোট) রাজনীতির ‘মেইন স্ট্রিম ফলো’ করুক। তারা যদি অন্য কিছু চিন্তা করে, মানুষ তা মেনে নেবে না। তবে গতবার নির্বাচনে না গিয়ে ভুল করেছে বিএনপি। এবার বিজয়ীরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নিলে আরেকটা ভুল করবে। তারা শপথ নিলে আরও প্রতিনিধিত্বশীল একটি শক্তিশালী সংসদ হবে, যাতে সব বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হবে।’ মহাজোটের নিরঙ্কুশ জয়ের বিষয়ে প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ বলেন, মানুষের মধ্যে মৌলিক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ এখন উন্নয়ন ও শান্তি চায়, মহাজোট সরকার যা জনগণকে দিয়েছে। এ সরকার যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। সরকার গ্রামের গরিব মানুষদের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের ভাতা দিয়েছে। এসব ভাতা দেওয়ার কারণে এখন গরিব মানুষদের না খেয়ে মরতে হচ্ছে না। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনী সুদৃঢ় করেছে মহাজোট। তাই নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীদের নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী করেছে দেশের জনগণ।

মাদক, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করার কথা উল্লেখ করে এ মন্ত্রী বলেন, ‘মাদক, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সব সময় জিরো টলারেন্স। ভবিষ্যতে এ তিনটির বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।’ মহাজোট সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য নিয়ে তিনি বলেন, যে মেগা প্রকল্পগুলো চলমান রয়েছে সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উড়ালসড়ক, চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, আণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, বুলেট ট্রেন চালু, বিভিন্ন উপজেলায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, স্বাস্থ্য খাত আরও উন্নত করা। নিজের সংসদীয় আসন হাটহাজারীর উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি বিশেষ ইকোনমি জোন স্থাপন, হাটহাজারী থেকে ফটিকছড়ি ও রাউজান সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ এবং একটি টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর