সোমবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

অদৃশ্য কলারে বিশ্বাস

মির্জা মেহেদী তমাল

অদৃশ্য কলারে বিশ্বাস

শরাফত আলী সৌদি আরব যাচ্ছেন। তার লাগেজ বুকিং দিয়েছেন। হাতে তার হ্যান্ডব্যাগ। ফ্লাইটে ডাকের অপেক্ষায় আছেন। হঠাৎ তার মোবাইল বেজে ওঠে। ফোন ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি বলছিলেন, আপনি যে লাগেজ বুকিং দিয়েছেন, তার ওজন বেড়ে গেছে। এ জন্য অতিরিক্ত ফিস দিতে হবে। অন্যথায় লাগেজ নেওয়া যাবে না। এমন কথা শুনে শরাফত আলী আঁতকে ওঠেন। বলেন, কত টাকা লাগবে! অজ্ঞাত সেই ব্যক্তিটি ফোনে শরাফত আলীকে বলেন, ‘৫ হাজার টাকা পাঠান বিকাশে। এ কথা শুনে শরাফত আলী তাকে বলেন, ভাই কিছু কম নিয়েন। আমার কাছে এত টাকা নেই। অবশেষে ৩ হাজার টাকায় দফারফা হয়। শরাফত আলী নিজেই সেই টাকা বিকাশ করেন। শুধু ফোনে জেনেই টাকাটা বিকাশ করে দেন শরাফত। পরে শরাফত আলী জানতে পারেন, তার লাগেজের ওজন বেশি ছিল না। তিনি প্রতারণার শিকার। শরাফত আলীর মতো বিদেশগামী যাত্রীরাই এমন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিদেশ ফেরত যাত্রীরাও একইভাবে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দরে বিদেশগামী কিংবা বিদেশফেরত যাত্রীদের মধ্যে অনেকে ব্যাগেজের গায়ে নিজের ফোন নম্বর লিখে রাখেন। এতে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ এসব ফোন নম্বর সংগ্রহ করে প্রতারকরা। এরপর যাত্রীদের কাছে বিমানবন্দরের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফোন দেয় তারা। ফোনে যাত্রীদের কাছে ব্যাগেজের ওজন বেশি হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হয়। আর অসহায় যাত্রীরা অদৃশ্য সেই কলারের কাছে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন দুই প্রতারক ধরা পড়েছে। এরা হলেন মনির উদ্দিন ও দুখু মিয়া।

যাত্রীদের ব্যাগেজের ওজন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতারণা করে টাকা আদায় করত তারা। আটকের পর তাদের ছয় মাসের সশ্রম কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সূত্র জানায়, যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই প্রতারককে আটক করা হয়। পরে বিমানবন্দরের ভ্রাম্যমাণ আদালতে প্রেরণ করা হলে তাদের ৬ মাসের সশ্রম কারাদ- দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামিল আহমেদ।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এএপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল মনির উদ্দিন ও দুখু মিয়া নামের দুই প্রতারক। তারা যাত্রীদের ফোন করে বিমানবন্দরের কর্মকর্তা পরিচয় দিত। ব্যাগের ওজন বেশি হয়ে গেছে, টাকা না দিলে ব্যাগ যাবে না, এসব কথা বলত যাত্রীদের। টাকা দাবি করত তারা। বাধ্য হয়ে অনেকে বিশ্বাস করে তাদের কাছে বিকাশে টাকা পাঠাতেন। বিদেশগামী যাত্রী হওয়ায় তারা সাধারণত অভিযোগ করেন না। তবে কয়েকজন যাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারকদের অনুসরণ করা হয়।’

এএপিবিএনের আরেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন মনে করেন, প্রতারণা রোধে যাত্রীদের সচেতনতা জরুরি। কেউ ফোনে টাকা দাবি করলেও মুহূর্তেই বিশ্বাস না করে যাচাই করা উচিত। তার পরামর্শ, একইসঙ্গে পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর