বুধবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

পাসপোর্ট বাংলাদেশি নাগরিক ভিনদেশের

মির্জা মেহেদী তমাল

পাসপোর্ট বাংলাদেশি নাগরিক ভিনদেশের

সৌদি সরকার সে দেশ থেকে ১৩ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছে। গত সাত জানুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে দলটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। গতকাল (মঙ্গলবার) দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখন তাদের বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে মিয়ানমারের আড়াই লাখেরও বেশি নাগরিক এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশে আশ্রয় শিবির থেকে বিভিন্ন উপায়ে   বের হয়। এরা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিদেশে গিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ধরা পড়ার পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি প্রকাশ পায়। তবে অধিকাংশই প্রকাশ পায় না। বাংলাদেশি অপরাধী হিসেবেই থেকে যায় খাতা কলমে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বদনাম হচ্ছে বহির্বিশ্বে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা ওই ১৩ ব্যক্তি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে তারা মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিল। অবৈধভাবে পাসপোর্ট করা ও আইন না মানার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুলিশ সদর দফতরের অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ওই রোহিঙ্গা নাগরিকরা শুধু কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম নয়, দেশের উত্তরাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলার স্থায়ী বাসিন্দা পরিচয়েও পাসপোর্ট করেছেন। পাসপোর্ট করতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন এবং অনুমোদনের আগে পুলিশ পাসপোর্ট পেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে থাকে। কাদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও যারাজড়িত তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। যে ১৩ জন ঢাকায় এসে পৌঁছান তাদের সবাই পুরুষ। তাদের নাম ওমর ফারুক, মোসালিম, মোআরিফ, আবদুল মজিদ, খাজা মাঈনুদ্দীন, হাসিবুর রহমান, নাজিম বিল্লাহ, জামাল হোসেন, শামসুল আলম, আমানউল্লাহ, বকুল, মিজানুর রহমান ও মোমিয়া। তারা নিজেদের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা, ঝিনাইদহ, মাদারীপুরের বাসিন্দা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে পাসপোর্ট করেছে। তাদের প্রত্যেকেই ওমরাহ বা হজের জন্য তিন মাসের ভিসা নিয়ে ছিলেন। নির্দিষ্ট সময় পরও দেশে ফিরে না যাওয়ায় সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এবং জেদ্দার সুমাইসি কারাগারে ছিলেন।

গত ৬ জানুয়ারি মিডল ইস্ট আই অনলাইন সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে এমন একটি খবর প্রকাশ হয়। ফেরত পাঠানোর আগে রোহিঙ্গা নাগরিকরা গোপনে ভিডিও ও অডিও রেকর্ড করেন এবং সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে শেয়ার করেন। সেখানে একজন ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, তিনি পাঁচ/ছয় বছর ধরে সৌদি আরবে এবং তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। প্রত্যাবাসনের আগে তাদের হাতে হাতকড়া ছিল। অপর এক ব্যক্তি একটি অডিও ক্লিপে উল্লেখ করেন, তিনি রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি নন। তারপরও তাকে এমন একটি দেশে পাঠানো হচ্ছে যেটি তার দেশ নয়। প্রত্যাবাসনের আগে রাত ১২টার দিকে হঠাৎ কারা কর্তৃপক্ষ এসে তাদের গোছগাছ করে নিতে বলেন।

যে ১৩ জন ফিরে এসেছেন তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তাদের কারও কাছেই চুক্তিপত্র নেই। তারা সাময়িক ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে গিয়ে অবৈধ হয়ে যায়। অপর একটি সূত্র জানায়, ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের একজনের চট্টগ্রাম শহরে বাড়ি রয়েছে। সাধারণত তারা কক্সবাজার বা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললেও, এই রোহিঙ্গারা বেশ ভালো বাংলায় কথা বলেন। বাংলাদেশিদের সঙ্গে চেহারার মিল থাকায় তাদের আলাদা করাও কঠিন।

সর্বশেষ খবর