বুধবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

খালেদার জন্য আটকে আছে পুরাতন কারাগারের উন্নয়ন

সাখাওয়াত কাওসার

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য শুরু হচ্ছে না রাজধানীর পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এমন কোনো জায়গায় বেগম খালেদা জিয়াকে স্থানান্তরের পরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। যদিও প্রকৃতপক্ষেই বেগম খালেদা জিয়াকে কোথায় স্থানান্তর করা হচ্ছে, এ বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আজ (বুধবার) এ ব্যাপারে একটি বিশেষ বৈঠক হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গত ১ নভেম্বর ‘পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এর ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২১ দশমিক ৯০ একর জমিতে ছয় শ সাত কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেক-এ পাস হয় ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। বিভিন্ন ধাপের পর জুড়ি বোর্ড পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন করা হয় ফর্ম ৩ আর্কিটেক্টস নামের প্রতিষ্ঠানকে এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে। সূত্র বলছে, শুরুতে কর্তৃপক্ষের ভাবনায় ছিল কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার। তবে সেখানে খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে এমন আশঙ্কায় সেখান থেকে ফিরে আসা হয়। কারণ বেগম জিয়াকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে থাকতে হয়। নিয়মিতভাবে তাকে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের অধীনে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকার দূরত্ব একটি বড় ফ্যাক্টর। অনেকটা একই অবস্থা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের ক্ষেত্রেও। দূরত্ব এবং যানজটের কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়মিতভাবে সেখানে পাওয়া কঠিন হবে কারা কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে নিরাপত্তা এবং হাসপাতালের স্বাভাবিক কর্মকান্ডের বিষয়টি মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কারা কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে কারা অধিদফতরের উপমহাপরিদর্শক টিপু সুলতান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্প্রতি আমি ঢাকা বিভাগে যোগদান করেছি। তাই আমি এ বিষয়টিতে ওয়াকিবহাল নই। তবে সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খুব শিগগিরই বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। কোন প্রক্রিয়ায় কাজ শুরু হবে তা নিয়েও কাজ চলছে। জানা গেছে, নবাব সিরাজউদদৌলার পতনের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে ১৭৮৮ সালে একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হয় এ কারাগারটির কাজ। প্রায় ২৩০ বছরের সমৃদ্ধ ও প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে এটির। এ ছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকারী দেশপ্রেমিক অসংখ্য বাঙালির ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণ করে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে সরকার ৬০৭ কোটি টাকার বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করে। বিশাল সবুজে ঘেরা পুরো এলাকার মাঝেও থাকবে বিশাল জলাধার ও আধুনিক নির্মাণশৈলীর জাদুঘর থেকে শুরু করে সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম, নাটকের মঞ্চ, আধুনিক কার পার্কিং সমৃদ্ধ সিনেপ্লেক্সযুক্ত মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ৩.৫০ একর জমির ওপর ‘জোন-এ’-তে থাকছে মাল্টিপারপারপাস হল, কনভেনশন সেন্টার, সিনেপ্লেক্স, খাবার ঘর, সুইমিং পুল এবং অন্যান্য সুবিধাসহ গাড়ির পার্কিং। ১.৪০ একর জমির ওপর ‘জোন-বি’-তে থাকছে বুক স্টোর, ফুলের দোকান, ভূগর্ভস্থ গাড়ির পার্কিং। ১৭ একর জমির ওপর ‘জোন সি’-তে থাকছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর, কনফাইন্ড হেরিটেজ, উদ্যান ইত্যাদি। স্বরাষ্ট্র  মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উদ্যোগে তিন পর্বে গ্রহণ করা এ প্রকল্পটির প্রথম পর্বের মূল কাজ বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পাশাপাশি সহযোগিতায় থাকবে কারা অধিদফতর, ই এন সিজ ব্রাঞ্চ ও ওয়ার্ক ডাইরেক্টরেট। প্রকল্প সূত্র জানায়, কোন কোন স্থাপনা বা ভবন রাখা যায় বা কোন কোন স্থাপনা ভেঙে ফেলা প্রয়োজন তা পরিকল্পনামাফিক নির্ধারণ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কারা), কারা মহাপরিদর্শক, স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিভাগের স্থাপত্য বিভাগের প্রফেসর ড. শায়ের গফুর ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ড. ইশরাত ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের প্রফেসর আকতার মাহমুদ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি প্রফেসর আবু সাঈদ এম আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান ও স্থপতি রবিউল হোসাইনকে রাখা হয়। তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে পরবর্তীতে কী কী স্থাপনা তৈরি করা প্রয়োজন তার জন্য উন্মুক্ত ডিজাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় ৯৮টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করে। তবে ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের ডিজাইন জমা পড়ে। জুড়ি বোর্ড ফর্ম ৩ আর্কিটেক্টস নামের প্রতিষ্ঠানের নকশাকে বেছে নেয়। প্রথম স্থান অধিকারীকে নগদ এক লাখ টাকা দেওয়া হয়। ওই নকশা অনুযায়ীই প্রকল্পের সব অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে।

ফর্ম ৩ আর্কিটেক্টস-এর প্রধান স্থাপত্যবিদ দিদারুল আলম ভূঁইয়া বলেন, গত সোমবার আমরা ১৫ সদস্যের একটি সার্ভে টিম কাজ করেছি। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে ৩৭টি ছোট বড় ভবন সংরক্ষণ করার। বাস্তবায়নের কাজ কবে নাগাদ কীভাবে শুরু হবে তা আমি বলতে পারব না। তবে মঙ্গলবার এবং আগামীকাল (বুধবার) ক্যান্টনমেন্টে এ সংক্রান্তে বৈঠকের কথা জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর