মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

অতিথি পাখি মুখরিত বাইক্কা বিল

মোস্তফা কাজল, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে ফিরে

অতিথি পাখি মুখরিত বাইক্কা বিল

সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসতে শুরু করেছে অতিথি (পরিযায়ী) পাখি। ফলে ধীরে ধীরে মুখরিত হয়ে উঠছে বাইক্কা বিল।  সৌন্দর্যের আধার হিসেবে পরিচিত এ বিলের অতিথি পাখি দেখতে ভিড় প্রতিদিনই বাড়ছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছে এ বিল। সরেজমিন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত বাইক্কা বিল ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

দেখা গেছে, বিলের পাখি পর্যবেক্ষণের প্রথম টাওয়াটির আশপাশ এলাকা পাখির কলকাকলিতে মুখর। অতিথি পাখির  কলকাকলি, খুনসুটি, ওড়াউড়ি, পানির ভিতর ডুব দেওয়া আর দলবেঁধে সাঁতার কাটার দৃশ্য চোখে পড়ে। এখানে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসব দেখে পরিতৃপ্ত হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের মতো পরিযায়ী পাখির ঝাঁক বেঁধে বাইক্কা বিলের আকাশে উড়ে বেড়াতে এ বছর এখনো দেখা যায়নি। এ বিলে গতকাল পর্যন্ত বালিহাঁস, পানকৌড়ি, ডাহুক, কানাবক,  লেন্জা, সরালি, মাছরাঙা, গাঙচিলসহ অসংখ্য পরিযায়ী পাখি  দেখা গেছে। এ বছর বন বিভাগ অতিথি পাখির জীবন রক্ষায় নিয়েছে নানা ধরনের পদক্ষেপ। এমনটাই জানালেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আফজাল হোসেন শিকদার। এ বিলের পাখি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের দূরবীক্ষণ যন্ত্রের তত্ত্বাবধায়ক রাজ আহমেদ রাজু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর অতিথি পাখির সংখ্যা কিছুটা কম। তবে ভোর এবং সকালে অতিথি পাখিদের ওয়াচ টাওয়ারের কাছে দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দা মিন্নত আলী জানান, এবারও অতিথি পাখি এসেছে। তবে নানা বিলে ওরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ঢাকার লালবাগ থেকে শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে এসেছেন পর্যটক শফিকুর রহমান চৌধুরী ময়না। বাইক্কা বিলে গিয়ে হতাশ হয়ে তিনি বলেন, আমি ৩ বছর আগে যখন এসেছিলাম তখন অনেক অতিথি পাখি ছিল। কিন্তু এবার এসে আমি নিজেই অবাক।

পাখির সংখ্যা অনেক কম। অনেকের মতো তারও জিজ্ঞাসা এত পাখি গেল কোথায়! পরে আক্ষেপ করে আরও বলেন, বাইক্কা বিলে আসতে আসতে দেখেছি বিলের মধ্যে ১০-১২টি মৎস্য খামার হয়েছে। প্রাকৃতিক জলাভূমিকে খামারে রূপান্তরিত করা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। এসব স্থানে মানুষের পা যেখানে পড়েছে সেখানেই প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

বন্যপ্রাণী ও পাখি গবেষক আদনান আজাদ আসিফ জানান, পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসার পর তারা দুটো বিষয়কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়-নির্জন স্থান এবং জলজ উদ্ভিদ সমৃদ্ধ জলাভূমি। জলজ উদ্ভিদের ভিতর এরা লুকিয়ে থেকে শত্রুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে। এ দুটোর অভাব হলেই তারা ঝাঁকে ঝাঁকে আসা বন্ধ করে দেয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বর্তমানে গাঙচিল, সরালি, আর লেন্জা প্রকৃতির পাখি ছাড়া আর কোনো প্রজাতির পাখি এখানে চোখে পড়ে না। তারা এ জন্য শিকারিদের শ্যোন দৃষ্টি আর মাছের প্রকল্পে পাখির জন্য ক্ষতিকারক কীটনাশক (বিষ) ব্যবহারকে দায়ী করেন। তারা আরও অভিযোগ করেন, পাখি শিকারিরা এসব স্থান থেকে বিভিন্ন কায়দায় পাখি ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রি করছে। তাই এসব অতিথি পাখি আর বাইক্কা বিলকে নিরাপদ ভাবছে না। ফলে কমছে অতিথি পাখির সংখ্যা। দ্রুত এসব অসাধু অতিথি পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এক সময় পাখিশূন্য হয়ে পড়বে এ বাইক্কা বিল।

সর্বশেষ খবর