শনিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইশতেহারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে আসছে নতুন বাজেট

গুরুত্ব পাবে গ্রামীণ জনপদ
আকার হতে পারে সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকা

মানিক মুনতাসির

উন্নয়ন ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে গ্রামীণ জনপদ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিটি গ্রামে শহরের সব সুযোগ-সুবিধা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এতে প্রতিটি গ্রামই একদিন শহরে রূপ নেবে বলে মনে করে সরকার। নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নিয়ে ইতিমধ্যে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে জাতীয় বাজেট প্রণয়নের বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বা সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা রয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপির আকার প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ৯৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। তবে বাজেটের এসব অঙ্ক এখনো চূড়ান্ত নয়।

অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে সবচেয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে গ্রাম। গ্রামের সব স্কুল-কলেজ আধুনিকায়ন ও শিক্ষার মানোন্নয়ন, কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কৃষি ভর্তুকি বাড়ানো ও উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা, ব্যাংকের শাখা গ্রামে বাধ্যতামূলক চালুকরণ, সহজশর্তে ব্যাংক হিসাব খোলা ও ঋণপ্রাপ্তি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ, স্বল্প খরচে ডিস ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান, এলপি গ্যাস সহজলভ্য করা, ভূমিহীনকে খাসজমি বরাদ্দ, গৃহহীনকে ঘর প্রদান, আধুনিক বাজার ব্যবস্থা চালু, সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়িয়ে দারিদ্র্য সম্পূর্ণরূপে দূরীকরণ এবং ‘লাঙ্গল যার জমি তার, জাল যার জলা তার’ নীতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে প্রতিটি গ্রামে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এখন আমাদের বেশির ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। এজন্য গ্রামকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এ ছাড়া গ্রামে সুবিধা না বাড়ালে মানুষের শহরে আসার প্রবণতা কমবে না। এসডিজি বাস্তবায়নেও গ্রামকে উন্নয়ন করতে হবে। তবে উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরিতেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে উন্নয়ন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক  প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। সরকার আশা করছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে বাম্পার ফলন হওয়ার জন্য প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি  কোনোভাবেই কমবে না। ফলে জিডিপির প্রাক্কলিত চলতি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ধরে রাখতে পারবে। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া প্রতিটি বাজেটই আকারের দিক থেকে একটি অপরটিকে ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় নির্বাচনে জয়ী সরকারের জন্য যে বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে, তাও ইতিহাস সৃষ্টিকারী। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি। আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ শতাংশেই থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি রয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। জিডিপির অংশ হিসেবে যা ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেট ঘাটতি ২০ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা বেশি। আগামী বাজেটে পরিচালন ও অন্যান্য ব্যয়ের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৮৯০  কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১১ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে, আগামী অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত রাজস্ব আদায় হবে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্য রয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর থেকে আসবে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা রয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর