শনিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিকাশ প্রতারণা প্রতিদিন

মির্জা মেহেদী তমাল

বিকাশ প্রতারণা প্রতিদিন

সরকারি চাকুরে কিবরিয়া। একটি নম্বর থেকে তার মোবাইলে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়, তার বিকাশ নম্বর থেকে আগের দিন তিন হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে কি-না। হ্যাঁ সূচক জবাব পাওয়ার পর অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আমি বিকাশ থেকে বলছি। ভুল করে আপনার নম্বর থেকে বেশি টাকা চলে গেছে। পিন নম্বরটা বলুন। আমরা সমন্বয় করে দেব।’ পাল্টা কিছু প্রশ্ন এবং বাড়তি টাকা ফেরতের দরকার নেই বলার সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা কেটে দেন ওই ব্যক্তি। এরপর থেকে ওই মোবাইল ফোন আর খোলা পাওয়া যায়নি।

সচেতনতার কারণে কিবরিয়া প্রতারণা থেকে রক্ষা পেলেও ফেঁসে গেছেন তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন। বিল্লাল হোসেনের মোবাইল ফোনে ইংরেজিতে ‘বিকাশ’ শিরোনামের এক বার্তায় বলা হয়, তার অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে। কিছুক্ষণ পর একটি নম্বর থেকে ফোন করে বলা হয়, ‘ভুলে আপনার অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা চলে গেছে।’ আকুতি জানিয়ে টাকাটা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি তা ফেরত দেন। পরে যাচাই করে দেখেন, তার অ্যাকাউন্টে কথিত ৬ হাজার টাকা যোগ হয়নি। মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখেন, ‘বিকাশের’ বানান ভুল। বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। পরে নম্বরটি আর খোলা পাননি। দুজনেরই প্রশ্ন, বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সবার সিম নিবন্ধন করা হয়েছে। আর নিবন্ধিত সিম ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ নেই। তাহলে যেসব সিম ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তাদের সিম নিবন্ধনের তথ্য কোথায়? অবিলম্বে এই প্রতারণা বন্ধ চান তারা। আবার আর্থিক লেনদেনের তথ্য হুবহু প্রতারক চক্র কীভাবে জানতে পারছে তা নিয়েও প্রশ্ন তাদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিনই মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারী অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রতারকরা এমনভাবে ফাঁদ পাতে যে, গ্রাহক কিছু বুঝে ওঠার আগেই অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। অনেক সময় ‘এসএমএস’ দিয়ে ব্যালান্স যোগ হওয়াসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে সরাসরি টাকা চাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ‘হেল্পলাইন’ থেকে ফোন করে অ্যাকাউন্ট হালনাগাদ, নতুন অফার চালুসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহককে দিয়ে কয়েকটি ‘বাটন’ চাপিয়ে কৌশলে টাকা স্থানান্তর করে নেওয়া হচ্ছে অন্য অ্যাকাউন্টে। পরে সেই অ্যাকাউন্ট আর খোলা পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল অপারেটরদের চাকরিচ্যুত কর্মীদের কেউ কেউ এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। সারা দেশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য গ্রাহক নানা প্রতারণার শিকার হলেও প্রতিকারে এগিয়ে আসছে না সংশ্লিষ্ট কেউই। প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের ‘অজ্ঞতা’র কালিমা দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব কৌশলে এড়িয়ে যায় বিকাশ কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে এ বিষয়ে পুলিশের কাছে নালিশ করে সহসাই কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। তবে জনসচেতনতার লক্ষ্যে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম টিমের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণার শিকার শত শত মানুষের অভিযোগ পাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত এসব প্রতারককে আইনের আওতায় নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের সাইবার ক্রাইম টিম কাজ করছে। তবে এ জন্য সবার আগে গ্রাহককে সতর্ক হতে হবে।

প্রতারণার নানা পদ্ধতি : সাধারণত চারটি পদ্ধতিতে প্রতারণা হচ্ছে। কিবোর্ড বা সার্ভিস পরিবর্তনের নামেই গ্রাহকরা বেশি প্রতারিত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে প্রতারক মোবাইল ফোনে নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কল সেন্টারের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, কল সেন্টারের নামে ফোন দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হালনাগাদ করার জন্য নানা তথ্য চাওয়া হয়। উন্নত সেবা পেতে সার্ভিস পরিবর্তনের জন্য অফার করা হয়। প্রতারক মোবাইল ফোনের কিবোর্ড বা বাটনে বিভিন্ন অক্ষর বা সংখ্যা চাপতে বলে। ধাপে ধাপে বিভিন্ন তথ্য দিতে বলা হয়। কয়েকটি সংখ্যা দেওয়ার একপর্যায়ে ভেরিফিকেশনের নামে একটি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে তা ডায়াল বা মেসেজ অপশনে গিয়ে ‘ওকে’ বাটন চাপতে বলে। এভাবে প্রতারকের দেওয়া নম্বরটিতে অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা স্থানান্তর হয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর