শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

‘রাইপেন’-এ পাল্টাবে বিনিয়োগ পরিস্থিতি

সম্পৃক্ততা বাড়বে প্রবাসীদের, বহুমুখী ব্যবহার সম্ভব হবে রেমিট্যান্সের, বিদেশি বিনিয়োগ প্রক্রিয়া হবে সহজ, নেটওয়ার্কিং তৈরি হবে প্রবাসীদের অভিজ্ঞতা ও সেবা বিনিময়ের

জুলকার নাইন

বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবাসীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর একটি কার্যকর প্রস্তাবের সংক্ষিপ্ত নাম ‘রাইপেন’। পাঁচটি শব্দের আদ্যাক্ষর নিয়েই প্রস্তাবনার নামটি শুরু। আর-রেমিট্যান্স, আই-ইনভেস্টমেন্ট, পি-ফিলানথ্রপি, ই-এক্সচেঞ্জ এবং এন-নেটওয়ার্কিং। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনই বেশ কিছুদিন আগে এই প্রস্তাব আলোচনায় নিয়ে আসেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় তৈরি হয় টাস্কফোর্স। এখন তিনিই আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাই ‘রাইপেন’-এর বাস্তবায়নের গতি প্রত্যাশা করেন প্রবাসী বাংলাদেশি ও অর্থনীতিবিদরা। জানা যায়, রাইপেনের প্রথম অক্ষর ‘আর’ এর অর্থ হলো রেমিট্যান্স। প্রতি বছর ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে কিন্তু সেটি উপযুক্তভাবে কাজে লাগে না। বিশাল পরিমাণ রিজার্ভ অলস পড়ে থাকে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ও রিজার্ভের অর্থ কাজে লাগাতে একটি সেল এর প্রস্তাব আছে। এই সেলের মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ কাজে লাগিয়ে হতে পারে বড় বড় প্রজেক্ট। হতে পারে গভীর সমুদ্রবন্দরও। এতে করে কারও প্রতি মুখাপেক্ষী থাকতে হবে না। ‘আই’ অর্থ ইনভেস্টমেন্ট। এখানে ইনভেস্টমেন্ট সেল কাজ করতে পারে বিনিয়োগের সব প্রক্রিয়া সহজ করার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। এতে একদিকে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবে, কমবে জ্বালানি খরচ, জনশক্তির ব্যয়। ফলে লাভবান হবে দেশ। এই সেলের মাধ্যমে প্রবাসীদের বিনিয়োগ সংযুক্ত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীদের বহুমুখী বিনিয়োগ প্রস্তাবের বাস্তবায়নেও কাজ করবে এই সেল। পি-তে ফিলানথ্রপি। বিদেশিরা দাতব্যমূলক কাজে সহায়তা করে থাকেন, কিন্তু দেখা যায় যে এখানেও অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকে। তৈরি হয় পদে পদে বাধা, সেই জটিলতাগুলো দূর করতেও কাজ করা হবে। ই-তে একচেঞ্জ অব এক্সপেরিয়েন্স অ্যান্ড এক্সপারটাইজ। অর্থাৎ অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞান বিনিময়। বিদেশে অবস্থান করা অভিজ্ঞ প্রবাসীদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময় করার পদ্ধতি তৈরি হবে। বিদেশে কাজ করার প্রবাসী ডাক্তার বা শিক্ষক বা সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এসে সেবা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করে যাবেন। এর মাধ্যমে উপকৃত হবে এখানকার পেশাজীবীরা। এন-এর অর্থ হচ্ছে নেটওয়ার্কিং। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বড় বড় রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি ও বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবীদের মধ্যে একটি নেটওয়ার্কিং তৈরি করা। এর মধ্যে পেশাজীবীদের বাংলাদেশে সফরে আসার বিষয়ে যেমন নেটওয়ার্ক তৈরি করা যাবে তেমনি বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের ক্রাইসিসেও সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নেওয়া সম্ভব হবে। প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশের হয়ে লবিংও করতে পারবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন মনে করেন, ‘রাইপেন’ কর্মসূচি সফল হলে দেশের উন্নয়ন কাজে বরাদ্দের জন্য বিদেশি দাতা দেশসমূহের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হবে না বা তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে সত্যিকার অর্থেই সহযোগিতা করতে পারেন। পৃথিবীর দেশে দেশে এটি হয়ে আসছে। যেহেতু বিদেশি সাহায্য দিন দিন কমে আসছে, সে জন্য নব নব উদ্যোগ বা সৃষ্টিশীল উৎস খুঁজতে হবে আমাদের। নিজেদের উন্নয়নে নিজেদের মানুষদের কাজে লাগাতে পারলে অল্প খরচেই আমরা আমাদের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হতে পারি। এ ক্ষেত্রে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, আমাদের দায়িত্ব হবে সে উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দেশে-বিদেশে যারা যেখানেই আছি, দেশের সমৃদ্ধির জন্য নিজ থেকে দায়িত্ব পালন করা উচিত আমাদের। এটি করতে পারলে, নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারব। এগিয়ে যাবে আমাদের অর্থনীতি, পূরণ হবে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা- এস-ডি-জি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূর্ণ রূপ পাবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে এসে প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগ করার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়ে গেছে এখনো। উৎপাদক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানির অনুমোদন, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির অনুমতি, মূসক-নিবন্ধন, বিদেশি বিনিয়োগের বিভিন্ন লাইসেন্স, শিল্পপ্লট ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ নেওয়ার প্রক্রিয়া, খাত ওয়ারি বিভিন্ন পণ্যের লাইসেন্স, এনভারমেন্ট বিভাগের ছাড়পত্র- এসব কাগজপত্র করতে বহু ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। এই অফিস থেকে সেই অফিসে দৌড়াদৌড়ি, কার লবিং, ক্ষমতাবানদের  থেকে রেফারেন্স, আবার কোথাও বা বখশিশের নামে অযাচিত অর্থ ব্যয়ের মতো ঝামেলাও রয়ে গেছে। যদিও এসব ঝামেলা মোকাবিলায় সরকারি যথেষ্ট উদ্যোগ রয়েছে। তবে কিছু আমলাতান্ত্রিক বাধা ও অসৎ ব্যক্তিদের কারণে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এই সব সমস্যার সমাধান করতে পারে রাইপেন।

সর্বশেষ খবর