শনিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রাণ পেল বিউটি বোর্ডিং

রাশেদ হোসাইন, জবি

প্রাণ পেল বিউটি বোর্ডিং

একসময় সবার পদচারণায় মুখরিত থাকত বিউটি বোর্ডিং। কালের বিবর্তনে শহরের ব্যস্ত জীবনের মাঝে ধূসর হলো সেই স্মৃতি। শহর বড় হলো, বড় হলো কর্মময় জীবনের পরিধি। আগের অবস্থানেই রয়ে গেল বিউটি বোর্ডিং। জায়গা ছোট হলেও আত্মিক বন্ধনের কথা ভোলেনি কেউ। এদের মধ্যে কেউ কর্মময় জীবনের শেষ দিকে কেউবা আবার অবসরপ্রাপ্ত। ষাটের দশকে যাদের পদচারণায় মুখরিত থাকত এই বোর্ডিং, গতকাল তাদেরই মিলনমেলায় জৌলুশ ফিরে পেল এই বোর্ডিং। দূর-দূরান্ত দেশ-বিদেশ থেকে সবাই জড়ো হন এই মিলনমেলায়। এতে বোর্ডিংয়ের প্রাণ ফিরে পায়। প্রাণ খুলে কথা বলা আর পুরনো বন্ধুদের হৈচৈ আর আনন্দে সবাই স¥ৃতিচারণ নিয়ে ব্যস্ত। এ সময় তারা ফিরে যান স্বাধীনতার আগের উত্তাল দিনগুলোতে। ষাট দশকের ঢাকা নগরের সংগ্রামী সতীর্থদের নিয়ে এই মিলনমেলার আয়োজন  করেন পুলিশের সাবেক ডিআইজি ফিরোজ কবির মুকুল ও ডা. আবদুল কাইয়ুম। সকাল থেকেই সেই বিউটি বোর্ডিং আড্ডায় মুখরিত ষাটের দশকের ছাত্রনেতা যারা দেশের স্বার্থে করেছেন আন্দোলন-সংগ্রাম। একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় তারা ফিরে যান সেই দিনগুলোতে। আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা থেকে গণঅভ্যুত্থান। আর গণঅভ্যুত্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া নিয়ে সবাই স্মৃতিচারণ করেন। সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, সরকারের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা, অভিনেতা, নাট্যব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ীদের মিলনমেলায় দিনটিতে ছিল অন্যরকম আমেজ। সিক্ত ছিল বন্ধুত্বের ভালোবাসায়। মিলনমেলায় আগত বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর বলেন, এখানে যারা আছে সবাই স্বাধীনতার সৈনিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী এখানে হামলা চালায়। আমাদের মিলনমেলার মূল বন্ডিং হলো স্বাধীনতা। এ সময় তিনি শৈশবের স্মৃতিচারণ করেন। ঢাকা-১৭ আসনের এমপি ও অভিনেতা আকবর হোসেন ফারুক বলেন, ষাটের পরপরই মূলত স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়। তখন আমরা ছাত্রলীগের সেনা। তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে আন্দোলন সূচনা করতাম, তারপর আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যেতাম। আন্দোলন শেষে আমরা পুরান ঢাকার বিউটিতে বসতাম। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমরা যারা ষাটের দশকে ছাত্ররাজনীতি করতাম, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের  সৈনিক ছাত্রলীগে ছিলাম, তাদের মধ্যে যারা বেঁচে আছি তাদের নিয়েই আজকের এই মিলনমেলা। আমরা সে সময়েই দেশের জন্য জীবনবাজি রেখেছিলাম। আন্দোলন সংগ্রাম শেষে আমরা এখানে মিলিত হতাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার বাসা পাতলা খান লেন ছিল। সে কারণেই এখানে ছোটকাল থেকে আসা হতো। এটা আমাদের সামাজিক যোগসূত্র ছিল। কলকাতার কফি হাউসের মতো এখানে আমাদের আড্ডা ছিল। পুলিশের সাবেক এআইজি মালিক খসরু বলেন, এটা আমাদের আদর্শের মিলনমেলা, বাঙালির আদর্শের মিলনমেলা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আড্ডা, এখান থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের উন্মেষ হয়। বাঙালি জাতির চেতনার ক্রমবিকাশ ধারা বহমান রাখার জন্য এই মিলনমেলার আয়োজন। আয়োজক কাজী ফিরোজ মুকুল বলেন, ষাট দশকের বিপ্লবীদের নিয়েই এই মিলন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে তারা এখানে আসে। আমি চাই নতুন প্রজন্ম এখানে আসুক আমার মৃত্যুর পরও যেন আমার বন্ধুরা এটা চালিয়ে নেয় এটাই আমার কামনা। মিলনমেলায় আগতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- হুমায়ুন কবির সেলী, কে এম সাইফুদ্দিন আহমেদ, সুলতান টুকু, প্রফেসর ড. মো. জুবায়ের, মোজাফফর হোসেন পল্টু, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, আলমগীর শিকদার লোটন ও খসরু খান প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর