রবিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় হতাশা

শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর

চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, হবিগঞ্জ

বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় হতাশা

শাহ এ এম এস কিবরিয়া

আজ ২৭ জানুয়ারি। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার ১৪ বছর পূর্ণ হলো। দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে থাকা ভয়ানক এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া এখন শুরু হয়েছে। কিন্তু ঠিকমতো সাক্ষী না আসা, আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় ঠিকমতো আদালতে হাজির না হতে পারাসহ বিভিন্ন জটিলতায় বিচারকার্য এখন দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে। এ অবস্থায় বিচার নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটছে না নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের মনে। ২০০৫ সালের এ দিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। সভা শেষে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় তিনি ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ মোট ৫ জন নিহত হন। এতে আহত হন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরসহ ৪৩ জন। ওই ঘটনায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে বিলম্বিত হয় এর বিচারকার্য। অবশেষে ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের সর্বশেষ চার্জশিট আদালতে জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র এএসপি মেহেরুন্নেছা পারুল। এতে আসামি করা হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৩২ জনকে। ২০১৫ সালের ২ জুন মামলাটি বিচারের জন্য সিলেট দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়। এরপর থেকেই মামলার বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু ঠিকমতো সাক্ষী হাজির না হওয়া, একাধিক মামলা থাকায় দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক আসামিদের আদালতে হাজির না করতে পারাসহ নানা কারণে বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে। নিহত আবুল হোসেন ও সিদ্দিক  আলীর পরিবারের সদস্যরা চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচারকার্য বিলম্বিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, ১৪ বছরেও মামলার কোনো কিনারা না হওয়ায় হতাশা তো আছেই। তবুও এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দেখতে চান তারা। সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার অনতিবিলম্বে সম্পন্ন করা হবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় আহত বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির জানান, কখনো আসছে না সাক্ষী, আবার কখনো গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা বিভিন্ন মামলার আসামি থাকায় ঠিকমতো আদালতে হাজির করা সম্ভব হয় না। ফলে কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে যেহেতু ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার হয়েছে, সেহেতু এ হত্যাকাে রও বিচার অবিলম্বেই সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। মামলাগুলোর বাদী অ্যাডভোকেট মো. আবদুল মজিদ খান এমপি জানান, বিচারটি চলমান আছে। সবারই প্রত্যাশা বিচারটি দ্রুত সম্পন্ন হোক। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে এ বিচার দীর্ঘসূত্রতায় রূপ পেয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেকের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বাকি সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়ার পর মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হবে। আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই কিবরিয়া হত্যার বিচার হবে। মামলার আইনজীবী সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি (সরকারি কৌশলী) অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর জানান, এখন পর্যন্ত ১৭১ জনের মধ্যে ৪৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের ঠিকমতো আদালতে হাজির করতে না পারায় ঠিকমতো সাক্ষ্য নেওয়া যাচ্ছে না। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া জানান, আজ তার বাবার ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি বাবার কবরে ফুল দেবেন। দোয়া করবেন। সবাই নীল রঙের পোশাক পরবেন। তিনি বলেন, শুনেছি ৩ বছর ধরে মামলার বিচার চলছে। কিন্তু একটি সুষ্ঠু তদন্তের উদ্যোগ কখনো নেওয়া হয়নি। সুষ্ঠু তদন্ত না হলে সুষ্ঠু বিচার হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। অতএব বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আশাবাদী নই।

সর্বশেষ খবর