রবিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
যুক্ত হবে ক্যাবলকার ও সুউচ্চ টাওয়ার

জাফলংকে আন্তর্জাতিক মানে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ

মোস্তফা কাজল, সিলেট (জাফলং) থেকে ফিরে

জাফলংকে আন্তর্জাতিক মানে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ

সিলেটের প্রকৃতি কন্যা জাফলংকে আন্তর্জাতিক মানে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে আধুনিক ক্যাবলকার এবং সুউচ্চ টাওয়ার বসানো হবে। নির্মাণ করা হবে আন্তর্জাতিকমানের পর্যটক মোটেলও।

এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, এ স্থানে এসে পর্যটকরা ক্যাবলকার ভ্রমণে বিনা পাসপোর্টে ভারতের মেঘালয় রাজ্য দেখার সুযোগ পাবেন। জাফলং এলাকাকে ‘পর্যটন জোন’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রসঙ্গত, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত একটি এলাকা নাম জাফলং। সিলেট শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে এর অবস্থান। বর্তমানে এ এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল। পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিস্তৃত সুউচ্চ পাহাড়চূড়া জাফলংকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। এলাকার আঁকাবাঁকা সড়কপথ পার্বত্য অঞ্চলের কথা মনে করিয়ে দেয়। পাশেই রয়েছে তামাবিল জিরো পয়েন্ট। এ স্থান দিয়ে ভারতে আসা-যাওয়ার স্থলবন্দর রয়েছে। জাফলংয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এ ছাড়া ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুও অনেককে আকর্ষণ করে। সর্পিলাকারে বয়ে চলা ডাওকি নদীও টানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। এ নদীর পানির স্বচ্ছতাও জাফলংয়ের অন্যতম আকর্ষণ। কারণ নদীর গভীরে কী আছে- তার সব দেখা যায়, স্বচ্ছ কাচের মতন পানি। পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষকে ঘিরে জাফলংয়ে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা। এখানেই রয়েছে গ্রিন পার্ক, খাসিয়াপুঞ্জি, জুমচাষ, সাতকরা ঝোম, কমলা বাগান, পিকনিক সেন্টার,পাথর কোয়ারি। রয়েছে উঁচু-নিচু অসংখ্য পাহাড়চূড়া, চা বাগান, পাখপাখালিদের কলতান। স্বচ্ছ নীলাভ জলের পিয়াইন নদীও রয়েছে। জাফলংয়ের আশপাশেই রয়েছে জৈন্তার রাজবাড়ি, সবুজাভ পাহাড়ে ঘেরা আর পাথুরেনদীর বিছনাকান্দি। সারা বছর জাফলং এলাকা থাকে পর্যটকে মুখরিত। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই, পুরো বছরই সব মৌসুমে জাফলং ও আশপাশের মনোহরিণী সৌন্দর্যের টানে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন। এই এলাকার পর্যটনের অপার সম্ভাবনার বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় পর্যটন মন্ত্রণালয় জোন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে।

জানা গেছে, জাফলং এলাকাকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসবে পর্যটন মন্ত্রণালয় ও ট্যুরিজম বোর্ড। এখানকার অবকাঠামোকে ঢেলে সাজানো হবে। জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে আড়াই হাজার পর্যটক আসেন। পুরো এলাকাকে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে পারলে এখানে আরও বেশি বিদেশি পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হবে। এ স্থানে বেড়াতে আসা ঢাকার এফএম স্কুল ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ফিরোজ মুকুল বলেন, জাফলং দেখতে ঢাকা থেকে আমরা ১৬ জন শিক্ষক এসেছি। নান্দনিক এ স্থান দেখে মুগ্ধ আমরা। মেঘলা আকাশে জাফলং- এক অন্য জগৎ। সংশ্লিষ্টদের মতে, হাজার বছর ধরে জাফলং ছিল খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীনে থাকা এক নির্জন বনভূমি। ১৯৫৪ সালে জমিদারি প্রথার বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে খাসিয়া-জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটলেও বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্তও জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা পতিত পড়েছিল। পরবর্তিতে ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে বিভিন্ন এলাকা থেকে  নৌপথে জাফলং আসতে শুরু করেন। পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকলে একসময় গড়ে ওঠে নতুন জনবসতি। সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ও জাফলং এলাকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে নৌ-যোগে সহজে ভারতে প্রবেশ বা সেখান থেকে এদেশে আসার ছিল সুবিধাজনক। আশির দশকে সিলেটের সঙ্গে জাফলংয়ের ৬০ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে জাফলংয়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের কথা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেমীরাও ভিড় করতে থাকেন জাফলংয়ে। ব্যবসায়িকভাবেও জাফলং অনেক বিখ্যাত। বিশেষ করে পাথরের জন্য। এ ছাড়া বর্ষাকালে ভারতীয় সীমান্তবর্তী শিলং মালভূমির পাহাড়গুলোতে বৃষ্টিপাত হলে ওইসব পাহাড় থেকে ডাওকি নদীর প্রবল স্রোত বয়ে আনে বড় বড় গ-শিলা। এ কারণে সিলেট এলাকার জাফলংয়ের নদীতে পাথর পাওয়া যায়। এখানে বাঙালিরা যেমন বসবাস করে, তেমনি বাস করে উপজাতিরাও। জাফলংয়ের বল্লা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর জুড়ে রয়েছে পাঁচটি খাসিয়াপল্লী।

সর্বশেষ খবর