রবিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজপথের আতঙ্ক

মির্জা মেহেদী তমাল

রাজপথের আতঙ্ক

রাজধানীর গ্রিন রোড দিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল ৫ম শ্রেণির ছাত্র সুমন। হঠাৎ একটি কুকুর এসে তার পায়ে কামড়ে দেয়। এমন ঘটনায় পথচারীরা অনেকটা অবাক হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়া এভাবে বাচ্চাটিকে কুকুর কামড় দেওয়ার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককেই। এভাবে যখন তখন প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কুকুরের কামড়ে আহত হচ্ছে কেউ না কেউ। এ অবস্থা ঢাকার প্রায় সব এলাকাতেই। রাতে ঢাকার রাজপথ থাকে ভয়ঙ্কর এই বেওয়ারিশ কুকুরের দখলে। তবে এর জন্য সংশ্লিষ্টরা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও তাদের সহযোগী এনজিও অভয়ারণ্যকেই দায়ী করেছেন।

জানা গেছে, বেওয়ারিশ কুকুর নগরীর বিভিন্ন মহল্লা বা রাস্তার মোড়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাতে রাস্তায় কুকুরের জন্য আর নগরবাসী হাঁটতে পারছেন না। গোটা রাজধানীতেই এখন এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই এসব কুকুর দলবদ্ধভাবে কাউকে না কাউকে কামড়াচ্ছে। এতে ছড়াচ্ছে নানা রোগ জীবাণু। সংশ্লিষ্টরা বলছে, রাজধানী ও এর আশপাশে যত মানুষকে কুকুরে কামড়ায়, তাদের বড় অংশটি মহাখালীর জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে কুকুরের কামড় খেয়ে ঢাকায় অন্তত ৮ হাজার মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হওয়ার এ পরিসংখ্যান আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে এদের মাধ্যমে মানবদেহে ছড়াচ্ছে র‌্যাবিস, টক্সো প্লাজমোসিস ও কালাজ্বরের মতো ভয়াবহ রোগের জীবাণু। আর এ পরিস্থিতির জন্য বাসিন্দারা দায়ী করেছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও তাদের সহযোগী এনজিও অভয়ারণ্যকে। কুকুরের উপদ্রব কমাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ৪০০ মেয়ে কুকুরকে বন্ধ্যত্বকরণ ও ৪০০ পুরুষ কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকার ওপরে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কুকুরকেও এ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। কিন্তু তাতেও কুকুরের অত্যাচার কমেনি। তবে এ বিষয়ে ডিসিসি উত্তর তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জানা গেছে, ২০১২ সালে উচ্চ আদালত কুকুর নিধনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারির পর ওই বছরের মার্চ মাসে অভয়ারণ্য নামে ওই বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সঙ্গে চুক্তি করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ওই বছর ১ এপ্রিল থেকে তারা কার্যক্রম শুরু করে। চুক্তিতে শর্ত ছিল তারা বেওয়ারিশ কুকুর নিধন না করে বন্ধ্যত্বকরণ এবং টিকাদানের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় কুকুর নিয়ন্ত্রণ করবে। আর এ চুক্তি অনুযায়ী, রাজধানীর রাস্তাঘাট থেকে বেওয়ারিশ কুকুরগুলো বসিলা এলাকায় অভয়ারণ্যের নিজস্ব ক্লিনিকে নিয়ে বন্ধ্যা করে ছেড়ে দেওয়ার কথা, যাতে কুকুরের বংশবিস্তার রোধ করা যায়। এ কাজের জন্য অভয়ারণ্যকে বিনামূল্যে ওষুধ, যন্ত্রপাতি এবং অর্থ দেয় সরকার। এ বাবদ দুই সিটি করপোরেশন দৈনিক খরচের ভিত্তিতে প্রতি মাসে অভয়ারণ্যকে ৮০ হাজার টাকা করে দেয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই অভিযোগ ওঠে, সরকারের একজন প্রভাবশালীর আত্মীয় হওয়ায় অভয়ারণ্যের চেয়ারম্যান সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের তোয়াক্কা করেন না। এ কারণে বছর খানেক ধরে সিটি করপোরেশন ও তাদের অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে নতুন করে ডিসিসি দক্ষিণ প্রথমে ৪০০ মেয়ে কুকুরকে বন্ধ্যত্বকরণ ও ৪০০ পুরুষ কুকুরকে ভ্যাকসিন দিয়েছে। কিন্তু তাতেও কুকুরের যন্ত্রণা কমেনি। নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর রাজপথ থেকে শুরু করে অলিগলিসহ সর্বত্রই বেড়েছে কুকুরের যন্ত্রণা। দিন কি রাত এই কুকুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। সংঘবদ্ধ কুকুরের দলের চিৎকার আর চেঁচামেচিতে অনেকেরই রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। এসব কুকুর নিয়ন্ত্রণ বা নিধনেও নেই তেমন কোনো কার্যক্রম। ফলে রাজধানীতে বাড়ছে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা। ডিসিসি দক্ষিণের স্বাস্থ্য বিভাগ জানান, রাজধানীতে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত অধিক হারে বাড়লেও তাদের নিধন করা যাবে না। কারণ এ জন্য জাতীয় সংসদে আইন পাস করা হয়েছে। ফলে এসব কুকুরের বংশবিস্তার ঠেকাতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আশা করা যায় কুকুরকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর