নদী দখল নিয়ে আলাদা মামলা ও পুনর্দখলের সমালোচনা করেছে হাই কোর্ট। আদালত বলেছে, দেশে শত শত নদী রয়েছে। এসব নদী দখলকে কেন্দ্র করে পৃথক মামলা ও পৃথক আদেশ হয়। দখলদাররা ফের দখল করে। এমনটি চলতে দেওয়া যায় না। আমরা এসব বিষয়কে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে চাই। নদী নিয়ে এসব কানামাছি খেলা বন্ধ হওয়া উচিত। গতকাল তুরাগ নদ রক্ষাসংক্রান্ত একটি মামলার রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করে। রায়ের বাকি অংশ ঘোষণার জন্য আগামী রবিবার দিন ঠিক করেছে আদালত। বুধবার এ রায় ঘোষণা শুরু করা হয়েছে। রায়ে আদালত বলে, এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের একটি রায় ও গাইডলাইনের আলোকে নদী রক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। আইন তৈরি হয়েছে। আমরা তা দেখে আরও কিছু গাইডলাইন দিয়ে রায় দেব। এর আগে বুধবার নদীকে জীবন্ত সত্তা উল্লেখ করে মানুষের মতো সাংবিধানিক অধিকার পাবে বলে অভিমত দিয়েছে হাই কোর্ট। রায়ের বুধবারের ঘোষিত অংশে তুরাগ নদকে ‘লিগ্যাল পারসন’ ঘোষণা করা হয়। এ মামলার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের আলোকে আইনপ্রণেতারা যখন আইন প্রণয়ন করেছেন, তখন নদীরক্ষা কমিশনকে একটি ঠুঁটো জগন্নাথ হিসেবে তৈরি করেছেন। কমিশন শুধু প্রতিবেদন বা সুপারিশ দিতে পারবে। কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে না। সে কারণে কমিশন যে উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে, তা পরিপূর্ণতা পাচ্ছে না। এ কারণে আমরা বার বার আদালতে আসি।’ আদালত বলেছে, আমরা এমন একটি রায় দিতে চাই যেন অবৈধ দখলমুক্ত করতে বার বার আদালতে আসতে না হয়। এসব বিষয় নিয়ে আদালত দেখছে অন্য আরও বিষয় দেখে রায় দেবে। যেন একটি গাইডলাইন অন্য একটির সঙ্গে কনফ্লিক্ট তৈরি না হয়। এ সময় আদালত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়েও কথা বলেছে। আদালত বলে, সাংবাদিকদের তথ্যবহুল প্রতিবেদনের আলোকেই আমরা সমাজের অনিয়মের কথা জানতে পারি। সাংবাদিকরা বংশীবাদকের মতো। নদী দখলসহ সব ধরনের অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। ‘তুরাগকে মৃত ঘোষণা সময়ের ব্যাপার’ শিরোনামে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ রিট আবেদন করে। এরপর এ রিটের শুনানি নিয়ে আদালত কয়েক দফা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশসহ রুল জারি করে। ওই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে বুধবার রায় ঘোষণা শুরু করে আদালত।
