শিরোনাম
শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাহিত্যচর্চাই সঠিক পথ দেখাবে

অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাহিত্যচর্চাই সঠিক পথ দেখাবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বইমেলা কেবল বই কেনা-বেচার জন্য নয়; বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। যতই আমরা যান্ত্রিক হই না কেন, বইয়ের চাহিদা কখনো শেষ হবে না। তিনি গতকাল বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাহিত্য চর্চা পারে যুব-সমাজকে সঠিক পথে ধরে রাখতে। চিন্তা-চেতনা বিকশিত করতে পারে বই। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান আর কখনো হবে না। নতুন বইয়ের মলাট, বই শেলফে সাজিয়ে রাখা, বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে, সবসময় তা পাওয়ার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই মলাটের ভেতরে কাগুজে বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এ বইকে ডিজিটাল দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে হবে। অনলাইনে বই থাকলে তা বিশ্বের সবার কাছে দ্রুত পৌঁছে যায়। ডিজিটাল লাইব্রেরি গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ৫২ এর ভাষা আন্দেলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন। এ মেলা এবং এ আন্দোলনের ইতিহাস আমাদের ধরে রাখতে হবে। তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন না, তখন এই বইমেলায় এসে অনবরত ঘুরে বেড়াতেন। এখন বলতে গেলে তাকে এক ধরনের বন্দী জীবনই যাপন করতে হয়, আসার আর সুযোগ হয় না, আসতে গেলে অন্যের অসুবিধা হয়। এই অন্যের অসুবিধা নিরাপত্তার কারণে মানুষের যে অসুবিধাগুলো হবে, তার কারণে অন্যরা কষ্ট পাবে। এসব বিবেচনা করে আর আসার ইচ্ছাটাও হয় না। তিনি বলেন, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী মনটা সবসময় পড়ে থাকে এই বইমেলায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির ইতিহাস হচ্ছে ত্যাগের ইতিহাস। আর সেই ত্যাগের মধ্যদিয়ে আমাদের অর্জন। এইটুকু বলতে চাই, একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যখন আওয়ামী লীগ সরকারে ছিল, তখন এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কো ঘোষণা দেয় এবং এটা আমরা অর্জন করি।

বিজয় : ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ নবপর্যায় প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল শুরু  হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ পর্যন্ত ১৬ বার অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক মাস চলবে বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ, মিসরের লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনীর সভাপতি ফরিদ আহমেদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠান সঞ্চালক ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার।

সুরের ধারার শিল্পীদের গাওয়া জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা  হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে শিক্ষার প্রসারে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ বর্ণনা করে বলেন, শিক্ষাগ্রহণ করে একটি জাতি আরও উন্নত হতে পারে। দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত হতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়েই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃথিবীর ১২টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এটা অনেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বপ্রণোদিত হয়েও কিন্তু অনুবাদ করে দিয়েছেন। বিশ^ সাহিত্যকে জানার জন্য অনুবাদ একান্তভাবে প্রয়োজন এবং আমাদের সাহিত্য বিভিন্ন ভাষায় জানা, এটাও প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব। এই দুই উদযাপনের মধ্যদিয়ে জাতির ইতিহাসকে আরও স্বচ্ছভাবে দেশের মানুষের কাছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা যাবে বলে আস্থা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা দেশকে আজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশ। আর্থ-সামাজিকভাবে বাংলাদেশ আরও উন্নত-সমৃদ্ধশালী হোক, সেটাই আমরা কামনা করি। বাংলাদেশ বিশে^ মাথা উঁচু করে চলবে, বাঙালি জাতি সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত। অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী চারজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এরা হলেন- মোহিত কামাল (কথাসাহিত্য), আফসান চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য), কাজী রোজী (কবিতা), সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ (প্রবন্ধ ও গবেষণা)।  সেই সঙ্গে তিনি ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভলিউম-২, ১৯৫১-১৯৫২ (SECRET DOCUMENTS OF INTELLIGENCE BRANCH ON FATHER OF THE NATION BANGABANDHU SHEIKH MUJIBUR RAHMAN (VOLUME-2, 1951-1952)-এর মোড়ক উন্মোচন করেন। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মোহসেন আল-আরিশি রচিত বইয়ের অনুবাদ ‘শেখ হাসিনা : যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’ বইটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। 

সর্বশেষ খবর