কবিতা স্বপ্ন, চেতনা আর মানবতার কথা বলে। যখন সেটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, শিকার হয় বর্বরতার, তখন কবিতাই হয় প্রতিবাদের ভাষা। ঠিক এ রকমই ঐতিহাসিক বাস্তবতায় ১৯৮৭ সালে ‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’ স্লোগান নিয়ে শুরু হয়েছিল জাতীয় কবিতা উৎসব। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণের  হাকিম চত্বরে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ৩৩তম জাতীয় কবিতা উৎসব-২০১৯। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঙালির জয় কবিতার জয়’। জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত এই উৎসবে অংশ নিচ্ছেন দেশ-বিদেশের কবিরা। গতকাল বেলা ১০টায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসানের সমাধিসৌধ এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এবারের আসরের সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মুহাম্মদ সামাদ। উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতিম লীর সদস্য রুবী রহমান। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয় মুক্ত আলোচনা পর্ব। উদ্বোধনী বক্তব্যে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, প্রবল রাজনৈতিক সংকটের মুহূর্তে জাতীয় কবিতা পরিষদ গোটা জাতির সামনে উপস্থিত হয়েছিল সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে। পল্লীকবি থেকে বিশ্বকবি দেশ বন্দনার অমর দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন যা আমাদের এক অম্লান প্রেরণা। কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত বলেন, কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘তেত্রিশ বছর কেটে গেল কেউ কথা রাখেনি’-আমরা কথা রেখেছি। বাংলা ভাষার কবিরা কথা রেখেছে, কবির কলম সত্য উচ্চারণের জন্য জেগে থাকে বলেই বাঙালির বীরত্বগাথা হাজার বছর ধরে কবিতায় বেঁচে আছে। সভাপতির বক্তব্যে কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, প্রতি বছর জাতীয় কবিতা উৎসব সমসাময়িক কালকে ধারণ করে কণ্ঠে তুলে নেয় তার মর্মবার্তা। তাই এবারের উৎসবের মর্মবার্তা ‘বাঙালির জয়, কবিতার জয়’। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো দিন যেন মুজিববিরোধী, মুক্তযুদ্ধবিরোধী অন্ধকারের শক্তি মাথা তুলতে না পারে এখন আমাদের সেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার সময়। উৎসবে নয়টি পর্বে দেশ ও বিদেশের কবিরা তাদের স্বরচিত কবিতা পাঠ, সেমিনার ও গান পর্বে অংশ নিচ্ছেন। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, শ্রীলঙ্কা, ইরাক, স্পেন প্রভৃতি দেশের কবিরা অতিথি কবি হিসেবে অংশগ্রহণ করছেন।