শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইসলামী দলগুলোয় ক্ষোভ ও হতাশা

৭০টি দল ছাড় পায়নি একটি আসনেও

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিশাল বিজয় ও নতুন সরকার গঠিত হলেও দলটির মিত্র ইসলামী দলগুলোর মধ্যে উচ্ছ্বাস নেই। জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই ইসলামী দলগুলোয় স্থবিরতা বিরাজ করছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ৭০ ইসলামী দল মিত্রতা গড়ে তুললেও একটি আসনেও ছাড় পাননি তারা। বেশ কয়েকটি ইসলামী দলের শীর্ষ নেতা আশা করেছিলেন, সংসদে যেতে না পারলেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রিসভায় জায়গা দেবেন তাদের। কিন্তু তা হয়নি। এ অবস্থায় তাদের কেউ কেউ মহজোটে থাকবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন।  কেউ কেউ ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহৎ ইসলামী জোট গঠনের কথা ভাবছেন। তবে কেউ কেউ এখনো আশা ছাড়ছেন না। রাজনৈতিক পদে নিয়োগ পেতে তারা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে, ইসলামী ঐক্যজোট আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করেও প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পাওয়ায় দলটি হতাশায় রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেও শেষ পর্যন্ত তা জমা দেননি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী। আর সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন দলের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। ইসলামী ঐক্যজোটের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসাইন কুমিল্লা-১ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে তা জমা দিতে পারেননি দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী। ফলে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমরা দলকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে যাব। তিনি বলেন, আমরা ১৪ দলের শরিক দল ছিলাম না। এখন রাজনৈতিক নিয়োগ চাওয়া বা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম পীর বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে সংকট চলছে এর চাইতে বড় সংকট হলো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। এ সংকটের সমাধান না হলে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না, যা বিগত দিনের কর্মকাে  প্রমাণিত। জানা গেছে, মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, সাবেক এমপি এম এ আউয়াল এবং মো. নূরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় ইসলামী জোট ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স ভেঙে একটি একক রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হতে পারে। ১৫ দলীয় ইসলামী জোট ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের কো-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র এম এ আউয়াল লক্ষ্মীপুর-১ আসনের জন্য মহজোট থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এই আসন থেকে তিনি দশম সংসদের এমপি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘একটু তো ক্ষোভ আছেই জোটের শরিক দলের সবার মধ্যেই। এবারের সংসদে ইসলামী দলগুলোর কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। তাই আমরা যারা ইসলামী দলের প্রতিনিধিত্ব করছি তাদের মধ্যে ক্ষোভও আছে, হতাশাও আছে। মহাজোট থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ নিজ দলের প্রতীকে চাঁদপুর ৫ ও নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হতো তাহলে আমার দুটির যে কোনো একটি আসন থেকে জয়লাভ করতে পারতাম। নির্বাচন নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন আছে। এটা দিবালোকের মতো সত্য। একই ঘটনা ঘটে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ক্ষেত্রেও। এইচ এম এরশাদের সঙ্গে জোট করেছিল দলটি। শেষ পর্যন্ত মহাজোট থেকে একটি আসনও না পেয়ে দলীয়ভাবে ভোট করে তারা।

এ ছাড়া জাকের পার্টি, খেলাফত আন্দোলনের একাংশ, সম্মিলিত ইসলামী জোট মনে করে, আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখেনি।

সর্বশেষ খবর