শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে চিকিৎসকের আত্মহত্যা নিয়ে তোলপাড়, স্ত্রী আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে চিকিৎসকের আত্মহত্যা নিয়ে তোলপাড়, স্ত্রী আটক

স্বামী আকাশের সঙ্গে মিতু

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের (৩২) আত্মহত্যায় প্ররোচনার

অভিযোগে তার চিকিৎসক স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। স্ত্রীর নাম তানজিলা হক চৌধুরী ওরফে মিতু। গতকাল বেলা ১১টার দিকে নগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। এ সময় মিতুকেও আনা হয়। তবে তাকে

সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। আকাশের

আত্মহত্যায় তার স্ত্রী মিতুর কোনো বন্ধু যদি প্ররোচনা দিয়ে থাকেন, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাকেও আটক করা হবে বলে জানায় পুলিশ। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার একটি বাসায় চিকিৎসক আকাশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের শিরায় বিষপ্রয়োগ করে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে বুধবার দিবাগত রাতে আকাশের সঙ্গে তার স্ত্রী মিতুর কথাকাটাকাটি হয়। রাত ৪টার দিকে মিতু তার বাবার বাড়িতে চলে যান। পরে আকাশ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের একাধিক অভিযোগ এনে নিজের  ফেসবুকে পোস্ট দেন। বৃহস্পতিবার সকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আকাশকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, আকাশের স্ত্রী মিতুকে রাত ১২টার দিকে নগরের নন্দনকানন এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বামীর অভিযোগের বিষয়ে কিছু স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আর কিছু বিষয় এড়িয়ে গেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার দেবদূত মজুমদার, চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার, ওসি (তদন্ত) জোবাইর  সৈয়দ প্রমুখ। আকাশ চন্দনাইশ উপজেলার বরকল বাংলাবাজার এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। তিনি ২০১৬ সালে ভালোবেসে মিতুকে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে বলে তিনি স্ট্যাটাসে তুলে ধরেন। তার স্ট্যাটাসটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। বেরিয়ে আসছে অনেক কথা : চিকিৎসক মোস্তাফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার পর একের পর এক বের হয়ে আসছে স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু ও তার পরিবারের নানান কুকীর্তির কথা। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিতু উগ্র জীবনযাপনসহ নানা বিষয়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’

জানা গেছে, চিকিৎসক আকাশের সঙ্গে বিয়ের আগে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন মিতু। বিয়ের পরও বিভিন্ন জনের সঙ্গে সেই সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন। এমনকি পড়াশোনার জন্য বিদেশে অবস্থানকালেও একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। মিতুর উগ্র জীবনযাপনে সমর্থন, আকাশকে মানসিক নির্যাতনসহ নানান অভিযোগ পাওয়া গেছে মিতুর পরিবারের বিরুদ্ধে। আকাশের ছোট ভাইয়ের বন্ধু তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগ করেন, আকাশের আত্মহত্যার জন্য যতকুটু মিতু দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী তার পরিবার। তাদের আমানুষিক নির্যাতনের কারণেই আকাশ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।

ভিডিওতে স্বীকারোক্তি : তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ২৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে মিতু নিজের মুখে স্বীকার করেছেন নিজের বিবাহবহির্ভূত একাধিক সম্পর্কের কথা। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মিতু অনেকটা অস্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন। তার মুখের এক কোণে ছিল রক্তের দাগ এবং মারধরের চিহ্ন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে মিতুকে বলতে শোনা যায়, ‘প্যাটেলের সঙ্গে এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফায়ার ছিল, আমি  শোভনের সঙ্গে, মাহবুবের সঙ্গে হোটেলে গেছি বিয়ের আগে, আকাশের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থায়ই।’

কয়েক ঘণ্টা আগে হাতাহাতি : আকাশ আত্মহত্যা করার কয়েক ঘণ্টা আগেও দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে মিতুর বাবা এসে মেয়েকে নিজের বাসায় নিয়ে যান। এরপর ভোরের দিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেন আকাশ।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান বলেন, তিন বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেন আকাশ ও মিতু। বিয়ের পরপরই মিতু অমেরিকা চলে যান। তখন  থেকেই বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গত ১৩ জানুয়ারি মিতু দেশে আসার পর তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। গত বুধবার রাতে এ নিয়ে তাদের হাতাহাতিও হয়।

সর্বশেষ খবর