রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছুটির দিনে দর্শনার্থী বেশি

মোস্তফা মতিহার

ছুটির দিনে দর্শনার্থী বেশি

সরকারি ছুটির দিন, তাই লোকসমাগম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রকাশকরা যতটা আশা করেছিলেন  ততটা লোকসমাগম হয়নি। আর যারা এসেছেন তাদের মধ্যে ক্রেতা খুঁজে পাওয়াটাও ছিল দুষ্কর। ক্রেতার পরিবর্তে দর্শনার্থীই বেশি ছিল গতকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিনে। জনপ্রিয় লেখকদের বই ছাড়া মেলার অন্য লেখকদের বই খুব একটা বিক্রি হয়নি বললেই চলে। শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থাগুলো ছাড়া অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকাশনা সংস্থাগুলোর স্টলের সামনে ভিড় খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি। অন্যান্য বছর শনিবার ছুটির দিনে যে ধরনের ভিড় থাকে এ বছর মেলার প্রথম শনিবার সে ধরনের ভিড় দেখা না যাওয়ার বিষয়ে আলো ঘর প্রকাশনীর দায়িত্বে থাকা রুপম কুমার দেব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাণিজ্য মেলার কারণে মেলা কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্য বছর ১ জানুয়ারি বাণিজ্য মেলা শুরু হয়ে ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর ৯ জানুয়ারি বাণিজ্য মেলা শুরু হওয়ার কারণে শেষও হবে দেরিতে। বাণিজ্য মেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মেলা তার চিরচেনা রূপে ফিরে যেতে সক্ষম হবে না বলেও মনে করেন তিনি। এদিকে মেলায় আগতদের সুবিধার্থে টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের প্রবেশপথে ডিজিটাল মনিটর থাকার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বাংলা একাডেমি তা স্থাপন করেনি। অন্যদিকে গতকাল মেলার দ্বিতীয় দিনেও মাত্রাতিরিক্ত ধুলোর উৎপাতে অতিষ্ঠ ছিলেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে আগতরা। গত দুই দিনে মেলায় মোট বই প্রকাশিত হয়েছে ৮৮টি। এর মধ্যে প্রথম দিন প্রকাশ হয়েছে সাতটি আর গতকাল ৮১টি। প্রকাশের দিক থেকে এগিয়ে রাখলেও বিক্রির দিক থেকে এবারের মেলা এখনো জমে ওঠেনি। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে মেলা পুরোদমে জমে উঠবে বলে মনে করেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক। গতকাল মেলার দ্বিতীয় দিন ছিল এ বছরের প্রথম শিশুপ্রহর। বেলা ১টা পর্যন্ত শিশুচত্বরে হালুম-টুকটুকিদের সঙ্গে মজা করেছে, ঘুরে ঘুরে বই কিনেছে শিশুরা। সেখানকার বটতলায় স্থাপন করা হয় সিসিমপুর মঞ্চ। সেখানে সকালে দেখা হলো, শিশুদের প্রিয় টেলিভিশন কার্টুন চরিত্র সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকি, ইকরি আর সিকুদের সঙ্গে। দুপুরে মেলার বিন্যাস নিয়ে সবার মুখে প্রশংসা থাকলেও বেশির ভাগ প্রকাশক ধুলো ওড়া নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছিটানো প্রয়োজন বলেও জানান তারা।

নতুন বই : গতকাল নতুন বই এসেছে ৮১টি। এর মধ্যে গল্প ১০, উপন্যাস ২০, প্রবন্ধ ৪, কবিতা ১৪, গবেষণা ১, ছড়া ১, জীবনী ৩, রচনাবলি ৪, মুক্তিযুদ্ধ ৪, নাটক ১, বিজ্ঞান ৩, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ৫, সায়েন্স ফিকশন ২ ও অন্যান্য ৭টি। আবিষ্কার এনেছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘সোনালী দুঃখ’, অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে মোহিত কামালের উপন্যাস সমগ্র (১) ‘মন ভুবন’, উৎস প্রকাশন এনেছে মোস্তফা সেলিমের ‘খবর নিশান’, সময় এনেছে আনিসুল হকের ‘দুষ্টু মেয়ের দল’ ও সুমন্ত আসলামের ‘অযান্ত্রিক’, ময়ূরপঙ্খী এনেছে মিতালী পারকিন্সের ‘রিকশা কন্যা, আগামী এনেছে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সম্পাদিত মাহবুবুল হক শাকিল স্মারকগ্রন্থ, পুঁথিনিলয় এনেছে জাকির তালুকদারের ‘মুষ্টিবদ্ধ সেই হাত’, পাঞ্জেরী এনেছে মুনতাসীর মামুনের ‘রাজকন্যের জন্য’ ইত্যাদি।

মূল মঞ্চ : বিকাল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিজয় : ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশ নেন লেখক-সাংবাদিক হারুন হাবীব, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী এবং গবেষক মোফাকখারুল ইকবাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি আসাদ মান্নান ও কবি হালিম আজাদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন ইস্তেকবাল হোসেন ও লায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। সংগীত পরিবেশন করেন তিমির নন্দী, শিবু রায়, রুমানা ইসলাম, আলম আরা মিনু ও শ্যামা সরকার।

সর্বশেষ খবর