শিরোনাম
রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মামলা করেও টাকা পাচ্ছে না ব্যাংক

ক্রিসেন্টের ঋণ কেলেঙ্কারিতে আরও পাঁচ মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

খেলাপি ঋণের অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে ক্রিসেন্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে ঢাকার অর্থঋণ আদালতে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। জনতা ব্যাংক লি. থেকে নেওয়া গ্রুপটির ৩ হাজার ৫৭২ কোটি ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ৯১৮ টাকা আদায়ের জন্য এ মামলা করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এসব মামলায় গ্রুপটির চেয়ারম্যান এম এ কাদের এবং এই গ্রুপের অন্য অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ১৯ জনকে আসামি (বিবাদী) করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন ব্যক্তি ও বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানকে বিবাদী করা হয়েছে। ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের বিপরীতে রুজু করা মামলা নম্বর ১৩/২০১৯। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরকে। এ ছাড়া একই মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস সুলতানা বেগম মণি ও পরিচালক রেজিয়া বেগম। ব্যাংক থেকে নেওয়া এই কোম্পানির ঋণ ৮৯৪ কোটি ৯২ লাখ ১৭ হাজার ১৫৫ টাকা। ক্রিসেন্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার লিমিটেডের বিপরীতে দায়ের করা মামলার নম্বর ১৪/২০১৯। এ মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে এম এ কাদেরকে। তিনি এই কোম্পানিটির চেয়ারম্যান। এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- মিসেস সুলতানা বেগম মণি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার লিমিটেড। এম এ কাদেরের মেয়ে সামিয়া কাদের নদী। তিনি এই কোম্পানির পরিচালক। এই কোম্পানির কাছে ব্যাংকের পাওনা ৯২৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯৯ হাজার ৩১৩ টাকা।

ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের বিপরীতে অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলার নম্বর ১৫/২০১৯। এ মামলায়ও প্রধান আসামি এম এ কাদের। যিনি ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান। এ মামলায় অন্য আসামি কোম্পানিটির পরিচালক মিসেস সুলতানা বেগম মণি। আরেক পরিচালক রেজিয়া বেগমকেও আসামি করা হয়েছে এ মামলায়। এই কোম্পানির কাছে ব্যাংকের পাওনা ১৭৩ কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার ৪০৬ টাকা। ক্রিসেন্ট গ্রুপের আরেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান লেক্সকো লিমিটেডের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলার নম্বর ১৬/২০১৯। এ মামলারও প্রধান আসামি করা হয়েছে এম এ কাদেরকে। তিনি এই কোম্পানিরও চেয়ারম্যান। অন্য আসামি মিসেস সুলতানা বেগম মণি। তিনি লেক্সকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। লেক্সকো লিমিটেডের আরেক পরিচালক হারুন-অর রশীদকেও আসামি করা হয়েছে। এই কোম্পানির কাছে ব্যাংকের পাওনা ৪৪৬ কোটি ২৬ লাখ ২৮ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। ক্রিসেন্ট গ্রুপের আরেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলার নম্বর ১৭/২০১৯। এ মামলার আসামি দুজন- রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আবদুল আজিজ ও কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস লিটুল জাহান মীরা। এই কোম্পানিটির কাছে ব্যাংকের পাওনা ১১৩ কোটি ৪ লাখ ৯৭ হাজার ১২৬ টাকা।

এদিকে অর্থ পাচারের অভিযোগে করা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মামলায় গ্রেফতার হওয়া ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের কারাগারেও ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। তিনি সেখানে আরাম-আয়েশেই সময় পার করছেন। কারাগারে বসেই তিনি বাসায় রান্না করা খাবার খাচ্ছেন। অবৈধভাবে প্রথম শ্রেণির বন্দীর মর্যাদা নিচ্ছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের একাধিক সূত্র ও কারাগার থেকে গতকাল জামিনে মুক্তি পাওয়া একাধিক আসামির সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান এম এ কাদের ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করেছেন- এমন অভিযোগে চকবাজার থানায় মানি লন্ডারিং আইনে এম এ কাদের ও ব্যাংকের দুই ডিএমডিসহ ১৭ জনের রিুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করা হয়। তিন মামলায় ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, রিমেক্স ফুটওয়্যার ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ, ৪৮১ কোটি ২৬ লাখ ও ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ তিন মামলায় আসামি হলেন ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ কাদের, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগম মণি, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ ও এমডি লিটুল জাহান মীরা, জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ডিএমডি (সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন জিএম) মো. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি (তৎকালীন জিএম জনতা ব্যাংক লিমিটেড) ফখরুল আলম, জিএম মো. রেজাউল করিম, ডিজিএম কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ, এ কে এম আসাদুজ্জামান, মো. ইকবাল, এজিএম (সাময়িক বরখাস্ত) মো. আতাউর রহমান সরকার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. খায়রুল আমিন, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. মগরেব আলী, প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মুহাম্মদ রুহুল আমিন, সিনিয়র অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. সাইদুজ্জাহান, মো. মনিরুজ্জামান ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।

 

সর্বশেষ খবর